ব্যবহারকারী আলাপ:Gazisaiful
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী লেখক আব্দুন্ নূরের সাক্ষাৎকার সাক্ষাৎকার গ্রহণ - গাজী সাইফুল ইসলাম
শূন্যবৃত্ত খ্যাত আবদুন্ নূর ৬৬ বছরের জীবনে লিখেছেন মাত্র চারটি উপন্যাস (নন-ফিকশন) যেমন- প্যাগাসাস, শূন্যবৃত্ত(ইউপএিল-১৯৯০), উত্তরণ (ইউপএিল-২০০৩) ও বিচলিত সময় (ম্যাগনাম ওপাস-২০০৫/০৬)। তাঁর উপন্যাস প্যাগাসাস রচিত হয়েছে গায়েনার পটভূমিতে ভারতীয়দের নিয়ে, শূন্যবৃত্ত শিকাগো ও ওয়াশিংটনের পটভূমিতে প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে, উত্তরণ আধুনিক ঢাকার পটভূমিতে আর বিচলিত সময়ের পটভূমি মোগল আমলের ঢাকা। মি. নূরের জন্ম ১৯৩৯-এ, লেখালেখি শুরু ষাটের দশকে। ১৯৬০ থেকে ২০০৫, ৪৫ বছরের লিখালেখির জীবনের শেষ বারো বছরে তিনি লিখেছেন তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস বিচলিত সময়। বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের ক্ষুদ্র পরিসরে তাঁর ‘বিচলিত সময়’কে মাস্টার পিস বললে বোধহয় বেশি বলা হবে না। বলা আবশ্যক যে, এই লেখক তাঁর জীবনের বেশিরভাগটা সময় প্রবাসে থাকায় তাঁর অন্যান্য লেখা, যেমন- গল্প ও প্রবন্ধ, এগুলোর সঙ্গে আমাদের তেমন পরিচয় ঘটে নি। আবদুন্ নূর তাঁর উপন্যাসের প্লট বেছে নিয়েছেন মোগল ইতিহাসেরই একটা অংশ থেকে। এ উপন্যাসের রসদ সংগ্রহের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে পাঠ করেছেন মোগল ইতিহাস। গবেষণা চালিয়েছেন অহম ভাষা ও সমাজের ওপর। এ জন্য তাঁকে অনেক লেখকের লেখা থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়েছে। তাঁর আগের উপন্যাসগুলোতে এমন ব্যাপক গবেষণা ও সাধনার নজির আমরা দেখতে পাই না। বিচলিত সময় বিশাল আয়তনের উপন্যাস হলেও এর ভাষা অত্যন্ত প্রাঞ্জল, ছোট ছোট বাক্যে লেখক ইতিহাসকে গল্পাকারে উপস্থাপন করে সবার জন্য সুখপাঠ্য করেছেন। তাঁর ভাষার সরল মাধুর্যের জন্যই ইতহাসের গুরু গম্ভীর বিষয় উপন্যাসে সুখপাঠ্য হতে পেরেছে। অবশ্য বিষয় হিসেবে ইতিহাস কিছুটা নিরস। কেউ কেউ এমনও ভাবেন যে, ইতিহাস মানেই মৃত মানুষ আর রাজা-বাদশাহর কাহিনী। কাজেই এটা পড়ে কী হবে? এ অবস্থায় ইতিহাসের বিষয় উপন্যাসে উপস্থাপিত হয়ে যে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিতে পারে আব্দুন্ নূর তা দেখিয়েছেন। নারী-পুরুষের প্রেম উপাখ্যানের কিছু ব্যাখ্যা ছাড়া লেখক খুবই সতর্কতা Aej¤^b করেছেন তাঁর কাহিনী বিন্যাসে। বঙ্কিমচন্দ্র ও মীর মোশাররফ হোসেনের পরে এবং তাঁদের তুলনায় ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস রচনায় আবদূন নূর আরও দক্ষতা ও আধুনিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এসব দিক বিবেচনা করে তাঁর বিচলিত সময়কে আন্তর্জাতিক মানের উপন্যাস হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়। আমাদের এ সময়ের উপন্যাস সাহিত্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও শওকত আলী অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ নাম তবে উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে তাঁরা কেউই অতীতের এমন বিশাল ক্যানভাস বেছে নেন নি। বিশ্বের সেরা উপন্যাসগুলোর বেশিরভাগই কোনো না কোনো দেশের বিশেষ জাতি-গোষ্ঠির আত্মপচিয় ও আত্মবিশ্লেষণের ধ্রুবদি রূপ ছাড়া আর কিছুই না। বিচলিত সময় রচিত হয়েছে ১৬৬৯ সালের জুন থেকে ১৬৭৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই পনেরো মাসের বাংলার মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মুহাম্মদ আজম শাহের শাসনকালের Pz¤^K অংশগুলো নিয়ে। লেখকের উপস্থাপন জড়তামুক্ত ও রসোত্তীর্ণ হওয়ায় উপন্যাস পাঠে কালের খণ্ডকরণের ব্যাপারটি পাঠকের কাছে তেমন ধরা পড়ে না। এখানে পাঠক দেখতে পাবেন সেই সময়ের বাঙালি সমাজের ক্রমবর্ধ্বমান আত্মচেতনে উন্মুখ মানুষদের মুখ। আর কবি, শিল্পী ও মেহনতি মানুষ কীভাবে নিরন্তর চালিয়ে গেছেন তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। লেখকের আরেকটি বড় কৃতিত্ব হলো, হিস্ট্রি এজ ইট ইজ (History as it is) এই সূত্র তিনি মেনে চলেছেন। এ উপন্যাসে কবি সৈয়দ জাফর, দেবদাসী নর্তকী রশমী, মসলিন শাড়ি বয়ন শিল্পী মা আমেনা বেগম, পূর্তগীজ কুঠিয়ালের স্ত্রী বাংলার মেয়ে মারিয়া, মসজিদের ইতিহাস অনুসন্ধানী ইমাম শামসুদ্দীনসহ আরও অনেক মহান চরিত্রের দেখা পাওয়া যায়-যারা বাংলার মানুষের আত্মপরিচয় নির্মাণে যুগ যুগ ধরে নজির হয়ে থাকবেন। বিচলিত সময়ের মতো বিশালাকৃতির (দুখণ্ডে মোট ৯১৬ পৃষ্ঠা ) উপন্যাস রচনা করা সত্যি দুরূহ কাজ। একজন ফুলটাইম লেখেকের পক্ষেই কেবল এমন কাজে মনোনিবেশ করা সম্ভব। কিন্তু ফুলটাইম লেখক না হয়েও আবদুন্ নূর তা পেরেছেন কারণ তিনি জাত লেখক। বর্তমানে বিশ্ব সাহিত্যের বড় বড় লেখকগণ, বিশেষ করে, ইংরেজি ভাষায় যাঁরা লিখেন, অধিকাংশই ফুলটাইম লেখক। কারণ, তাঁদের পক্ষে লেখালেখি করে সম্মানজনকভাবে জীবীকা নির্বাহ সম্ভব হচ্ছে। যদিও বাংলা ভাষায় তা একেবারেই অকল্পনীয় ব্যাপার। মাস তিনেক আগে বিচলিত সময়ের প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষ্যে আব্দুন্ নূর বাংলাদেশে এসে মাস দেড়েক সময় অবস্থান করেন। এ সময় তিনি পারিবারিক পরিমণ্ডলের বাইরে বিভিন্ন লেখক ও মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর লেখালেখি নিয়ে খোলামেলা মত বিনিময় করেন। এ সময় তাঁর এ সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন-গাজী সাইফুল ইসলাম। এই সাক্ষাৎকারে মি. নূরের তিনটি বইয়ের ওপর আলোচনা স্থান পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, মি. নূর তাঁর ব্যক্তি জীবন এবং আমেরিকায় তাঁর কর্মজীবন সম্পর্কে একবারেই কথা বলতে চান নি।
[সম্পাদনা] উইকিপিডিয়া কী নয়
দয়া করে উইকিপেডিয়া:উইকিপিডিয়া কী নয় ভালমত পড়ে দেখুন। উইকিপিডিয়াকে আপনি ব্যক্তিগত রচনা প্রকাশের স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। নিজের প্রচারের জন্যও এই সাইটের কোন অংশ আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না। ধন্যবাদ--অর্ণব (আলাপ | অবদান) ০৯:২৮, ২১ মে ২০০৭ (UTC)