ট্রানজিস্টর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ট্রানজিস্টর (Transistor) একটি অর্ধপরিবাহী কৌশল যা সাধারণত অ্যামপ্লিফায়ার এবং বৈদ্যুতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত সুইচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার, সেলুলার ফোন এবং অন্য সকল আধুনিক ইলেকট্রনিক্‌সের মূল গাঠনিক উপাদান হিসেবে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়। দ্রুত সাড়া প্রদানের ক্ষমতা এবং সঠিক সম্পূর্ণ সঠিকভাবে কার্য সাধনের ক্ষমতার কারণে এটি আধুনিক ডিজাটাল বা অ্যানালগ যন্ত্রপাতি তৈরীতে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। নির্দিষ্ট ব্যবহারগুলোর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক অ্যামপ্লিফায়ার, সুইচ, ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রক, সংকেত উপযোজন এবং ওসিলেটর। আলাদা আলাদাভাবে ট্রানজিস্টর তৈরী করা যায়। আবার সমন্বিত বর্তনীর অভ্যন্তরে একটি অতি ক্ষুদ্র স্থানে কয়েক মিলিয়ন পর্যন্ত ট্রানজিস্টর সংযুক্ত করা যায়।

বিচ্ছিন্ন ট্রানজিস্টর
বিচ্ছিন্ন ট্রানজিস্টর

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] সাধারণ আলোচনা

ট্রানজিস্টর ইলেকট্রনিক বর্তনীর একটি সক্রিয় অংশ। এর অন্তত তিনটি সংযোগ থাকে। দুইরকমের ট্রানজিস্টর সবচেয়ে বেশী দেখা যায়: বাইপোলার এবং ফিল্ড ইফেক্ট। বাইপোলার শ্রেণীর ট্রানজিস্টরে সংখ্যালঘু তড়িৎ-বাহকের অনুপ্রবেশকে কাজে লাগানো হয়। আর ফিল্ড ইফেক্টে শুধুমাত্র সংখ্যাগুরু তড়িৎ-বাহককে ব্যবহার করা হয়। প্রথমে বাইপোলার শ্রেণীটিই তৈরী হয়েছিল। বর্তমানে দুই ধরণের ট্রানজিস্টরেরই প্রয়োগ দেখা যায়। তবে শুধু ট্রানজিস্টর বললে বাইপোলার শ্রেণীকেই নির্দেশ করে।

[সম্পাদনা] ইতিহাস

ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টরের মূল নীতি সম্বন্ধে প্রথম তিনটি পেটেন্ট গৃহীত হয়েছিল ১৯২৮ সালে জার্মানীতে। পেটেন্ট করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী জুলিয়াস এডগার লিলেনফেল্ড। কিন্তু তিনি এই নীতি সম্বন্ধে কোন গবেষণাপত্র প্রকাশ করেননি বিধায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তার এই পেটেন্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেনি। ১৯৩৪ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ড: অস্কার হেইল ফিল্ড-ইফেক্ট ট্রানজিস্টরের আরেকটি পেটেন্ট করেন। এরকম কিছু পেটেন্ট গৃহীত হলেও তখনকার সময় এ ধরণের কৌশল তৈরী করা হয়েছিলো, এর সপক্ষে কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। কিন্তু ১৯৯০'র দশকের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে লিলেনফেল্ডের নকশাগুলোর মধ্যে একটি নকশা ঠিক এভাবে কাজ করেছিল এবং তা থেকে প্রতীক্ষীত পরিমাণ গেইন লাভ করা সম্ভব হয়েছিল। বেল ল্যাবরেটরি থেকে প্রাপ্ত আইনসম্মত পত্রাদি থেকে জানা গেছে, শকলি এবং পিয়ারসন সর্বপ্রথম এ ধরণের কৌশলের অপারেশনাল সংস্করণ তৈরী করেছিলেন। এই কাজ করতে যেয়ে তারা লিলেনফেল্ডের পেটেন্টকে ব্যবহার করেছিলেন যদিও তাদের কেউই এই পেটেন্টটিকে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করে যাননি। দ্য আদার ট্রানজিস্টর, আর. জি. আর্নস

১৯৪৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বেল ল্যাবরেটরির উইলিয়াম শকলি, জন বার্ডিন এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন পৃথিবীর প্রথম ব্যবহারিক পয়েন্ট-কন্টাক্ট ট্রানজিস্টর তৈরী করতে সক্ষম হন। তারা মূলত যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধে উপযোগীতার জন্য বিশুদ্ধ জার্মেনিয়াম কেলাস মিশ্রিত ডায়োড তৈরীর জন্য গবেষণা করছিলেন। এই ডায়োডগুলোকে ক্ষুদ্র তরঙ্গ রাডারের গ্রাহক যন্ত্রে ফ্রিকোয়েন্সি মিক্সার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। একই সময়ে Purdue University তে কর্মরত একদল গবেষক ভাল মানের অর্ধপরিবাহী জার্মেনিয়াম কেলাস তৈরী করতে সক্ষম হন। এই কেলাসগুলোই বেল ল্যাব্‌সে ব্যবহার করা হয়েছিল।[1] এর আগে ব্যবহৃত টিউব-ভিত্তিক প্রযুক্তি দ্রুত সুইচিংয়ের কাজ করতে পারতো না বিধায় এক্ষেত্র সেগুলো ব্যবহার করা সম্ভব ছিলনা। এ কারণে বেল ল্যাব্‌সের গবেষকরা এর পরিবর্তে সলিড স্টেট ডায়োড ব্যবহার করেছিল। এই জ্ঞানটুকু পুঁজি করে তারা একটি ট্রায়োড তৈরীতে মনোনিবেশ করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া মোটেই আগের মত সহজ ছিলনা। এই কাজ করতে গিয়ে তারা যে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশীষ্ট্য লক্ষ্য করেন তা ব্যাখ্যা করার জন্য বার্ডিন এক নতুন ধরণের তলীয় পদার্থবিজ্ঞানের অবতারণা করেন। এর মাধ্যমে বার্ডিন ও ব্রাটেইন একটি কর্মক্ষম কৌশল তৈরীতে সমর্থ হন।

একই সময় কিছু ইউরোপীয় বিজ্ঞানী সলিড-স্টেট অ্যামপ্লিফায়ারের ধারণা নিয়ে গবেষণা করছিলেন। ১৯৪৮ সালের আগস্টে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী Herbert F. Mataré (১৯১২ -) এবং Heinrich Welker (১৯১২ - ১৯৮১) সংখ্যালঘু তড়িৎ-বাহকের অনুপ্রবেশের উপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি অ্যামপ্লিফায়ারের উদ্ভাবন বিষয়ে পেটেন্টের আবেদন জানান। তারা এই কৌশলটির নাম দিয়েছিলেন ট্রানজিসট্রন। তারা তখন প্যারিসের Compagnie des Freins et Signaux Westinghouse নামক একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪৮ সালের জুনের আগে যেহেতু বেল ল্যাব্‌স ট্রানজিস্টর সম্পর্কীয় কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি সেহেতু ধারণা করা হয় ট্রানজিসট্রন স্বাধীনভাবেই নির্মিত হয়েছিল। Mataré ই প্রথম ব্যক্তি যিনি ট্রান্সকনডাকট্যান্স ক্রিয়া লক্ষ্য করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির রাডার যন্ত্রপাতির জন্য উপযুক্ত জার্মেনিয়াম ডুওডায়োড তৈরীর সময় তিনি এটি লক্ষ্য করেছিলেন। ফরাসি টেলিফোন কোম্পানি এবং সামরিক বাহিনীর জন্য প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ট্রানজিসট্রন উৎপাদিত হয়েছিল। ১৯৫৩ সালে জার্মানির ডুসেলডর্ফে চারটি ট্রানজিসট্রন দ্বারা গঠিত একটি সলিড-স্টেট বেতার গ্রাহক যন্ত্র প্রদর্শিত হয়।

ব্যাল ল্যব্‌স নতুন এই উদ্ভাবনের জন্য একটি উপযুক্ত নাম সন্ধান করছিল। যে নামগুলো বিবেচনায় আনা হয়েছিল সেগুলে হচ্ছে: সেমিকন্ডাক্টর ট্রায়োড, সলিড ট্রায়োড, সার্ফেস স্টেট ট্রায়োড, ক্রিস্টাল ট্রায়োড এবং আয়োট্যাট্রন। কিন্তু জন আর. পিয়ার্স কর্তৃক প্রস্তাবিত ট্রানজিস্টর নামটি অভ্যন্তরীন ভোটে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। এই নামের পক্ষে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছিল তা বেল ল্যাব্‌সের টেকনিক্যাল মেমোরান্ডামে উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে:

Transistor. This is an abbreviated combination of the words "transconductance" or "transfer", and "varistor". The device logically belongs in the varistor family, and has the transconductance or transfer impedance of a device having gain, so that this combination is descriptive.

– বেল টেলিফোন ল্যাবরেটরিস — টেকনিক্যাল মেমোরান্ডাম (মে ২৮, ১৯৪৮)

[সম্পাদনা] গঠন

[সম্পাদনা] কার্যপ্রণালী

[সম্পাদনা] গুরুত্ব

[সম্পাদনা] শ্রেণীবিভাগ

চারটি মানদণ্ড অনুসরণ করে ট্রানজিস্টরের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়:

  1. অর্ধপরিবাহী কেলাসের ধরণ এবং গাঠনিক অঞ্চলের সংখ্যা
  2. উৎপাদনের সময় অনুসৃত পদ্ধতি
  3. অর্ধপরিবাহী পদার্থের প্রকৃতি
  4. কিভাবে ব্যবহার করা হবে তা[১]

[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র

  1. ট্রানজিস্টর: বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ; চতুর্থ খণ্ড; লেখক- ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী

[সম্পাদনা] আরও দেখুন

  • অর্ধপরিবাহী কৌশল