গৌতম বুদ্ধ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের জন্ম লুম্বিনি গ্রামে,বর্তমান নেপালের অন্তর্গত)।জন্মের পর তার নাম ছিল সিদ্ধার্থ গৌতম। আধ্যাত্মিক সাধনা ও জীবন নিয়ে নিজস্ব জ্ঞান-উপলব্ধির পর তিনি বুদ্ধ নামটি গ্রহণ করেন। জন্ম ও মৃত্যু সাল অনিশ্চিত হলেও তা ৫৬৩ - ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে মনে করা হয়। তবে কেউ কেউ খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বা ৪১০ সালকে তার মৃত্যু সাল হিসেবে গণ্য করেন।
[সম্পাদনা] প্রথম জীবন
সিদ্ধার্থের পিতা ছিলেন শাক্য বংশীয় রাজা শুদ্ধধন। মাতা মহামায়া। মহামায়া কপিলাবস্তু থেকে পিতার রাজ্যে যাবার পথে লুম্বিনি গ্রামে(বর্তমান নেপালের অন্তর্গত)সিদ্ধার্থের জন্ম দেন ।তার জন্মের সপ্তম দিনে মহামায়া মৃত্যুবরণ করেন। পরে তিনি বিমাতা গৌতমী কতৃক লালিত হন।ধারণা করা হয় তার নামের "গৌতম" অংশটি বিমাতার নাম থেকেই এসেছে। আবার কারো কারো মতে এটি তার পারিবারিক নাম। জন্মের পঞ্চম দিনে রাজা ৮ জন জ্ঞানী ব্যাক্তিকে সদ্যজাত শিশুর নামকরণ ও ভবিষ্যত বলার জন্য ডাকেন। তার নাম দেয়া হয় সিদ্ধার্থ-"যে অর্থ সিদ্ধ করেছে, বা যার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে"। তাদের মধ্যে একজন বলেন, রাজকুমার একদিন সত্যের সন্ধানে বেরিয়ে যাবেন এবং আলোকপ্রাপ্ত হবেন। একজন রাজপুত্র হিসেবে সিদ্ধার্থ বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা লাভ করেন। তার বিয়ে সমন্ধে দুধরনের মত আছে। প্রথম মত অনুসারে ১৬ বছর বয়সে তিনি একটি প্রতিযোগিতায় তার স্ত্রীকে লাভ করেন। অতঃপর পুত্র রাহূল জন্মগ্রহণ করে। আর একটি মত অনুসারে ২৮ বছর বয়সে তাকে সংসারের প্রতি মনযোগী করার জন্য তার পিতামাতা তাকে রাজকন্যা যশধরার সাথে বিয়ে দেন। পরবর্তী বছরে জন্ম নেয় পুত্র রাহূল।
[সম্পাদনা] মহানিষ্ক্রমণ
কথিত আছে, একদিন রাজকুমার সিদ্ধার্থ বেড়াতে বের হলে ৪ জন ব্যাক্তির সাথে তার সাক্ষাত হয়। প্রথমে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ, অতঃপর একজন অসুস্থ মানুষ এবং শেষে একজন মৃত মানুষকে দেখতে পান। তিনি তার সহিস চন্নকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে চন্ন তাকে বুঝিয়ে বলে যে এটিই সকল মানুষের নিয়তি। আবার একদিন(কারো কারো মতে সেদিনই) তিনি চন্নকে নিয়ে বের হলেন। এবারে তিনি দেখা পেলেন একজন সাধুর, যার মাথা মুড়ানো এবং হলুদ রং এর জীর্ন পোশাক পরা।চন্নকে এনার সমন্ধে জিজ্ঞেশ করলে সে বলে উনি একজন সন্নাসী, যিনি নিজ জীবন ত্যাগ করেছেন মানুষের দুঃখের জন্য। সেদিন রাত্রেই ঘুমন্ত স্ত্রী, পুত্র, পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে তিনি প্রাসাদ ত্যাগ করেন। সাথে নিলেন চন্নকে। প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বনের শেষ সীমায় পৌছে তিনি থামলেন। তলোয়ার দিয়ে কেটে ফেললেন তার লম্বা চুল। অতঃপর চন্নকে বিদায় জানিয়ে যাত্রা শুরু করলেন আলোকের খোজে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে। সিদ্ধার্থের এই যাত্রাকেই বলা হয় মহানিষ্ক্রমণ।
[সম্পাদনা] নির্বাণ লাভ
দুঃখ ও দুঃখের কারণ সমন্ধে জানতে সিদ্ধার্থ যাত্রা অব্যাহত রাখেন। প্রথমে তিনি আলারা নামক একজন সন্নাসীর কাছে যান। তার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তিনি যান উদ্দক নামক আর একজনের কাছে। কিন্তু এখানেও কোনো ফল পেলেন না। এভাবে কিছু দিন যাবার পর তিনি মগধের উরুবিল্ব নামক স্থানে একটি গাছের নিচে ধ্যান শুরু করেন। কঠোর সাধণার ফলে তার শরীর ক্ষয়ে যায়। কিন্তু এ তপস্যায় তিনি ভয়, লোভ ও লালসাকে অতিক্রম করে নিজের মনের উপর সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে সক্ষম হলেন। সহসা তিনি বুঝতে পারলেন এভাবে আলোকলাভ হবেনা। তিনি তাই আবার খাদ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। সুগত নাম্নী এক নারীর কাছ হতে তিনি এক পাত্র দই আহার করলেন। অতঃপর তিনি নদীতে স্নান করে পুনরায় ধ্যাণে বসেন। অবশেষে কঠোর তপস্যার পর তিনি আলোকপ্রাপ্ত হলেন। তিনি দুঃখ, দুঃখের কারন, প্রতিকার প্রভৃতি সমন্ধে জ্ঞান লাভ করলেন। এ ঘটনাটিই নির্বাণলাভ নামে পরিচিত।