রক্ষণভাগের খেলোয়াড়
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ফুটবলে ডিফেন্ডার বা রক্ষণভাগের খেলোয়াড় বলতে সেই খেলোয়াড়ী অবস্থানকে বোঝান হয় যারা মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের পিছনে খেলেন এবং গোলরক্ষককে সহায়তা করেন। এদের প্রধান কাজ বিপক্ষদলের আক্রমণ প্রতিহত করা এবং গোল করা থেকে বিরত রাখা।
ডিফেন্ডার চার রকমের হতে পারে - সেন্টার ব্যাক, ফুল ব্যাক, উইং ব্যাক এবং সুইপার।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] সেন্টার ব্যাক
সেন্টার ব্যাক, সেন্টার হাফ, সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার বা স্টপার যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তাদের মূল কাজ হচ্ছে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় বিশেষ করে স্ট্রাইকারকে থামানো, গোল করা থেকে বিরত রাখা এবং পেনাল্টি সীমানা থেকে বলকে বের করে আনা। তাদের নামের মত তারা মাঠের মধ্যভাগে খেলে থাকে। বেশিরভাগ দলেই দুজন সেন্টার ব্যাক থাকে, যারা গোলরক্ষকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। সেন্ট্রাল ব্যাকগণ রক্ষণভাগের জন্য দুটি পন্থা অবলম্বন করে: মাঠের কিছু নির্দিষ্ট অংশ পাহারা দেয়া (জোনাল ডিফেন্স) অথবা কোন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে পাহারা দেয়া (ম্যান-টু-ম্যান মার্কিং)।
সেন্টার ব্যকগণ সাধারনত লম্বা হয়ে থাকেন এবং তাদের হেড ও ট্যাক্ল করার দক্ষতা বেশি থাকে। খেলা বোঝার ক্ষমতা একটি অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে কাজ করে। সাধারনত, নিম্নস্তরের ফুটবলে সেন্টার ব্যাকদের বল নিয়ন্ত্রণ বা পাস দেয়ার উপর দক্ষতার উপর মনোযোগ না দিয়ে বলকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দিতে পারাটাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে সেন্টার ব্যাকরা নিয়ন্ত্রণমূলক ফুটবলে দারুন ভূমিকা রাখেন।
এই অবস্থানটিকে আগে সেন্টার হাফ বলা হতো। এসময় অধিকাংশ দল ২-৩-৫ এই গঠন অনুসরন করত। রক্ষণভাগের দুজন খেলোয়াড়কে ফুল ব্যাক এবং তাদের সামনের তিনজনকে হাফ ব্যাক বলা হতো। সময়ের সাথে ফুটবলের গঠন পরিবর্তিত হয়েছে এবং সেন্টার হাফদের আরো পেছনে সরে রক্ষণভাগে অবস্থান নিতে হয়েছে, তাই তাদের নাম দাঁড়িয়েছে সেন্টার ব্যাক। ডান ও বাম পাশের খেলোয়াড়কে যথাক্রমে রাইট হাফ ও লেফট হাফ বলা হত।
সেন্টার ব্যাকগণ সাধারনত নিজেদের অর্ধেই থাকেন এবং নিজেদের গোল বাচাতে সচেষ্ট হন। তবে লম্বা খেলোয়াড়েরা কর্নার কিক বা ফ্রি কিকের সময় হেড করার জন্য আক্রমণভাগে চলে আসেন।
ফুটবলের ইতিহাসের কিছু উল্লেখযোগ্য সেন্টার ব্যক হলেনঃ জন টেরি, জেমি ক্যারাঘার, ফাবিও কান্নাভারো, আলেসান্দ্রো নেস্তা, লুসিও, কার্লেস পুইয়োল, রিও ফার্ডিনান্ড, রোবের্তো আয়ালা, ড্যানিয়েল অ্যাগার, লিলিয়ান থুরাম, সার্গেই র্যামোস, ইয়াপ স্টাম, ড্যানিয়েল ভ্যান বুইটেন প্রমুখ।
[সম্পাদনা] সুইপার
সুইপার একধরনের বিচিত্র সেন্টার ব্যাক, যারা প্রতিপক্ষ রক্ষণব্যুহ ভেদ করার চেষ্টা করলে বলকে "ঝাড়ু দেয়ার মত" সরিয়ে দেয়। অন্যান্য ডিফেন্ডারদের মত মাঠে এদের অবস্থান নির্দিষ্ট থাকে না। একারনে এই অবস্থানকে লিবেরো (ইতালীয় ভাষায় স্বাধীন) নামেও ডাকা হয়। খেলা বোঝার ক্ষমতা সুইপারের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুইপার সাধারনত প্রতি-আক্রমন চালাতে পারেন এবং এ কারনে সুইপারদের বল নিয়ন্ত্রণ ও পাস দেয়ার দক্ষতা বেশি থাকতে হয়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে পুরোপুরি রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হিসেবেও সুইপার ব্যবহৃত হয়। যেমন ১৯৬০ দশকের ইতালীয় ঘরানার খেলায় পুরোপুরি রক্ষণাত্মক একজন সুইপার ব্যবহৃত হয়েছিল যিনি কেবল রক্ষণব্যুহের চারপাশে দৌড়ে বেড়িয়েছেন।
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, ববি মুর, লরেন্ত ব্লাঁ, মাথিয়াস সামার, রুদ ক্রল, ফ্রাঙ্কো বারেসি ও ড্যানিয়েল প্যাসারেলা কিছু পরিচিত সুইপার। আধুনিক খেলার সুপারদের মধ্যে রাফায়েল মারকুয়েজ, লুসিও, ক্রিস্তিয়ান শিভু, ও পাওলো মালদিনি উল্লেখযোগ্য। তাদের রক্ষণাত্মক ভূমিকা চিরাচরিত সেন্টার ব্যাকের মত নয় বরং অনেকটা মধ্যমাঠের খেলোয়াড়ের মত। উদাহরণস্বরুপ, মারকুয়েজ আক্রমণকে পাসগুলো চিনতে পারেন বলে খ্যাত এবং তাই তিনি সহজে বিভিন্ন পাস নষ্ট করে দিতে ওস্তাদ, যার জন্য তাকে তেমন কোন ট্যাক্ল করতে হয় না। আধুনিক ফুটবলে সুইপারের ব্যবহার খুবই সীমিত, কেবল কয়েকটি উচু মানের ক্লাব এই অবস্থান ব্যবহার করে থাকে।
কেউ কেউ মনে করেন আক্রমনাত্মক সুইপার থেকেই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের জন্ম হয়েছে।