মঙ্গল গ্রহ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মঙ্গল ![]() |
|||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
![]() হাবল মহাকাশ দূরবীন থেকে দেখা মঙ্গল |
|||||||
কক্ষীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ | |||||||
ইপক জে২০০০[1] | |||||||
অপসূর দূরত্ব: | ২৪৯,২২৮,৭৩০ কিমি (১৫৪.৮৬৩,৫৫৩ মাইল) ১.৬৬৫ ৯৯১ ১৬ এইউ |
||||||
অনুসূর দূরত্ব: | ২০৬,৬৪৪,৫৪৫ কিমি (১২৮,৪০২,৯৬৭ mi) ১.৩৮১ ৩৩৩ ৪৬ এইউ |
||||||
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ: | ২২৭,৯৩৬,৬৩৭ কিমি (১৪১,৬৩২,৯৭৬ মাইল) ১.৫২৩ ৬৬২ ৩১ এইউ |
||||||
কক্ষীয় পরিধি: | ~১,৪৩০,০০০,০০০ কিমি (৮৮৮,০০০,০০০ mi) ৯.৫৫ এইউ |
||||||
কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা: | ০.০৯৩ ৪১২ ৩৩ | ||||||
নাক্ষত্রিক পর্যায়: | ৬৮৬.৯৬০০ দিন (১.৮৮০৮ বছর) |
||||||
যুতিকাল: | ৭৭৯.৯৬ দিন (২.১৩৫ বছর) |
||||||
গড় কক্ষীয় দ্রুতি: | ২৪.০৭৭ কিমি/সে (৫৩,৮৫৯ মাইল/ঘ) |
||||||
সর্বোচ্চ কক্ষীয় দ্রুতি: | ২৬.৪৯৯ কিমি/সে (৫৯,২৭৭ মাইল/ঘ) |
||||||
সর্বনিম্ন কক্ষীয় দ্রুতি: | ২১.৯৭২ কিমি/সে (৪৯,১৫০ মাইল/ঘ) |
||||||
নতি: | ১.৮৫০ ৬১° (সৌর বিষুবের সাথে ৫.৬৫°) |
||||||
উদ্বিন্দুর দ্রাঘিমা: | ৪৯.৫৭৮ ৫৪° | ||||||
অনুসূর কোণ: | ২৮৬.৪৬২ ৩০° | ||||||
উপগ্রহসমূহ: | ২ | ||||||
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |||||||
বিষুবীয় ব্যাসার্ধ্য: | ৩৪০২.৫ কিমি (২১১৪.২ মাইল) (পৃথিবীর ০.৫৩৩ গুণ) |
||||||
মেরু ব্যাসার্ধ্য: | ৩৩৭৭.৪ কিমি (২০৯৮.৬ mi) (পৃথিবীর ০.৫৩৩ গুণ) |
||||||
কমলাকৃতি: | ০.০০৭ ৩৬ | ||||||
পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল: | ১.৪৪৮×10৮<noinclude> কিমি²) ৫৫,৯০৭,০০০ বর্গমাইল (১৪৪ ৭৯৮ ৪৬৫ বর্গকিমি) (পৃথিবীর ০.২৮৪ গুণ) |
||||||
আয়তন: | ১.৬৩১৮×10১১<noinclude> কিমি³ (পৃথিবীর ০.১৫১ গুণ) |
||||||
ভর: | ৬.৪১৮৫×10২৩<noinclude> কেজি (পৃথিবীর ০.১০৭ গুণ) |
||||||
গড় ঘনত্ব: | ৩.৯৩৪ গ্রাম/সেমি³ | ||||||
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ: | ৩.৬৯ মি/সে২ (০.৩৭৬g) |
||||||
মুক্তি বেগ: | ৫.০২৭ কিমি/সে (১১,২৪৫ মাইল/ঘ) | ||||||
বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণন বেগ: | ৮৬৮.২২ কিমি/ঘ (৫৩৯.৪৯ মাইল/ঘ) | ||||||
এক্সিয়াল টিল্ট: | ২৫.১৯° | ||||||
উত্তর মেরুর বিষুবাংশ: | ৩১৭.৬৮১ ৪৩° (২১ ঘ ১০ মিন ৪৪ সে) |
||||||
বিষুবলম্ব: | ৫২.৮৮৬ ৫০° | ||||||
প্রতিফলন অনুপাত: | ০.১৫ | ||||||
পৃষ্ঠের তাপমাত্রা: সেলসিয়াস |
|
||||||
বিশেষণসমূহ: | মঙ্গলীয় | ||||||
বায়ুমণ্ডল | |||||||
পৃষ্ঠের চাপ: | ০.৭–০.৯ কিলো প্যাসকেল | ||||||
গাঠনিক উপাদান: | ৯৫.৭২% কার্বন ডাই অক্সাইড ২.৭% নাইট্রোজেন ১.৬% আর্গন ০.২% অক্সিজেন ০.০৭% কার্বন মনোক্সাইড ০.০৩% পানি বাষ্প ০.০১% নাইট্রিক অক্সাইড ২.৫ পিপিএম নিয়ন ৩০০ পিপিবি ক্রিপ্টন ১৩০ পিপিবি ফরমালডিহাইড ৮০ পিপিবি জেনন ৩০ পিপিবি ওজোন ১০ পিপিবি মিথেন |
সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ হচ্ছে মঙ্গল গ্রহ। পৃথিবী থেকে অনেকটা লাল দেখানোর কারণে এর অপর নাম হচ্ছে লাল গ্রহ। মঙ্গল সৌর জগতের শেষ পার্থিব গ্রহ। অর্থাৎ এরও পৃথিবীর মত ভূ-ত্বক রয়েছে। এর অতি ক্ষীণ বায়ুমণ্ডল রয়েছে, এর ভূ-ত্বকে রয়েছে চাঁদের মত অসংখ্য খাদ, আর পৃথিবীর মত আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি এবং মেরুদেশীয় বরফ। সৌর জগতের সর্ববৃহৎ পাহাড় এই গ্রহে অবস্থিত। এর নাম অলিম্পাস মন্স। সর্ববৃহৎ গভীর গিরিখাতটিও এই গ্রহে যার নাম ভ্যালিস মেরিনারিস। মঙ্গলের ঘূর্ণন কাল এবং ঋতু পরিবর্তনও অনেকটা পৃথিবীর মত।
১৯৬৫ সালে মেরিনার ৪ মহাকাশযান প্রথমবারের মত মঙ্গল গ্রহ অভিযানে যায়। এই অভিযানের পর থেকে অনেকেই ধারণা করে আসছিলেন যে মঙ্গলে তরল পানির অস্তিত্ব আছে। মঙ্গল থেকে পাওয়া আলো এবং আঁধারের তরঙ্গের মধ্যে পর্যাবৃত্ত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে এই ধারণা করা হয়। বিশেষত মঙ্গলের মেরু অঞ্চল থেকে এ ধরণের পরিবর্তন চোখে পড়ে, যা মহাসাগর বা জলাশয়ের প্রমাণ হিসেবে অনেকেই গ্রহণ করেছিল।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
মঙ্গলের ব্যাসার্ধ্য পৃথিবীর অর্ধেক এবং ভর পৃথিবীর এক দশমাংশ। এর ঘনত্ব পৃথিবী থেকে কম এবং ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল পৃথিবীর শুষ্ক ভূমির মোট ক্ষেত্রফল থেকে সামান্য কম।[১] মঙ্গল বুধ গ্রহ থেকে বড় হলেও বুধের ঘনত্ব মঙ্গল থেকে বেশী। এর ফলে বুধের পৃষ্ঠতলের অভিকর্ষীয় শক্তি তুলনামূলকভাবে বেশী। মঙ্গল দেখতে অনেকটা লাল রঙের কমলার মত। এর কারণ মঙ্গলের পৃষ্ঠতলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন (৩) অক্সাইডের উপস্থিতি। এই যৌগটিকে সাধারণভাবে রাস্ট বলা হয়।[২]
[সম্পাদনা] ভূ-তত্ত্ব
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মঙ্গলের ভূ-তত্ত্ব
মঙ্গলের পৃষ্ঠ মূলত ব্যাসল্ট দ্বারা গঠিত। এর কক্ষীয় বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষন এবং প্রচুর পরিমাণ মঙ্গলীয় উল্কা নিয়ে গবেষণা করে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে মঙ্গলের কিছু কিছু অংশে ব্যাসল্টের চেয়ে সিলিকা জাতীয় পদার্থ বেশী রয়েছে। এই অঞ্চলটি অনেকটা পৃথিবীর এন্ডেসাইট (এক ধরণের আগ্নেয় শীলা) জাতীয় পাথরের মত। এই পর্যবেক্ষণগুলোকে সিলিকা কাঁচের মাধ্যমেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। পৃষ্ঠের অনেকটা অংশ সূক্ষ্ণ আয়রন (৩) অক্সাইড যৌগ দ্বারা আবৃত। ধূলিকণা নামে পরিচিত এই যৌগটি অনেকটা ট্যালকম পাউডারের মত।[৩]
মঙ্গলের কোন অভ্যন্তরীন চৌম্বক ক্ষেত্র নেই। কিন্তু কিছু পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এর ভূ-ত্বকের কিছু অংশ চুম্বকায়িত হয়ে আছে। চুম্বকীয়ভাবে susceptible খনিজ পদার্থের কারণে সৃষ্ট এই চৌম্বকত্বকে প্যালিওম্যাগনেটিজ্ম বলা হয়। এই প্যালিওম্যাগনেটিজমের ধরণ অনেকটা পৃথিবীর মহাসাগরীয় গর্ভতলে প্রাপ্ত অলটারনেটিং ব্যান্ডের মত। এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে অধ্যয়ন এবং মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ারের সাহায্যে বিস্তর গবেষণা চালানোর মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে একটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে যা ২০০৫ সালের অক্টোবরে পুনরায় পরীক্ষীত হয়। এই তত্ত্ব মতে পর্যবেক্ষণকৃত ব্যান্ডগুলো হল মঙ্গলে প্লেট শিলাসরণ ভূ-গঠনপ্রণালীর একটি নিদর্শন। এ ধরণের ভূ-গঠনপ্রণালী ৪ বিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত মঙ্গলে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ৪ বিলয়ন বছর আগে গ্রহীয় ডায়নামো বিকল হয়ে পড়ায় চৌম্বক ক্ষেত্র অপসারিত হয়ে যায়।[৪]
গ্রহটির অভ্যন্তরীন গঠন অনুসন্ধানে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে এটি অন্তত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এর কেন্দ্রীয় অংশটির (core) ব্যাসার্ধ্য প্রায় ১,৪৮০ কিলোমিটার (৯২০ মাইল)। এই কেন্দ্রভাগ মূলত লৌহ দ্বারা গঠিত, অবশ্য লোহার সাথে ১৫ থেকে ১৭% সালফার রয়েছে বলে জানা যায়। এ হিসেবে মঙ্গলের কেন্দ্রভাগ আয়রন সালফাইড দ্বারা গঠিত যা অনেকাংশে তরল। এই পদার্থগুলোর ঘনত্ব পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত পদার্থের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কেন্দ্রের চারদিক ঘিরে সিলিকেট দ্বারা গঠিত একটি ম্যান্টল রয়েছে যা গ্রহটির অনেকগুলো শিলাসরণ এবং আগ্নেয় প্রকৃতির কাঠামো তৈরীতে মূল ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বর্তমানে ম্যান্টলটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। মঙ্গলের ভূ-ত্বকের গড় পুরুত্ব ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল)। তবে এই পুরুত্ব সর্বোচ্চ ১২৫ কিলোমিটার (৭৮ মাইল) পর্যন্ত হতে দেখা যায়।[৫] অন্যদিকে পৃথিবীর ভূ-ত্বকের পুরুত্ব গড়ে ৪০ কিমি (২৫ মাইল)। পৃথিবী এবং মঙ্গল এই গ্রহ দুটির আকৃতির অনুপাত বিবেচনায় আনলে পৃথিবীর ভূ-ত্বক মঙ্গলের ভূ-ত্বক থেকে মাত্র তিনগুণ পুরু।
মঙ্গলের ভূ-তাত্ত্বিক ইতিহাসকে অনেকগুলো ইপকে বিভক্ত করা যেতে পারে। তবে নিম্নে উল্লেখিত তিনটি ইপকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সুস্পষ্ট:
- নোয়াচিয়ান ইপক: (নোয়াচিস টেরার নামে নামাঙ্কিত), ইংরেজিতে Noachian epoch. ৩.৮ বিলিয়ন বছর থেকে ৩.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বের সময়কালটি নোয়াচিয়ান ইপক নামে পরিচিত। এই সময় মঙ্গলের পৃষ্ঠতল গঠিত হয় যা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। সেই যুগে সৃষ্ট পৃষ্ঠতলে পরবর্তীতে প্রচুর বিশালায়তন খাদের সৃষ্টি হয়েছে। থারসিস বাল্জ নামক একটি আগ্নেয় উচ্চভূমি এই সময় সৃ।টি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়েছে। এই ইপকের শেষের দিকে তরল পানির বন্যা হয়েছিল বলেও বদ্ধমূল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
- হেসপারিয়ান ইপক: (Hesperia Planum-এর নামে নামাঙ্কিত), ইংরেজিতে Hesperian epoch. ৩.৫ বিলিয়ন বছর থেকে ১.৮ বিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত এই ইপকের সীমানা। এই যুগে বিশালায়তন লাভা দ্বারা আচ্ছাদিত সমভূমির সৃষ্টি হয়।
- অ্যামাজোনিয়ান ইপক: (অ্যামাজোনিস প্ল্যানিটিয়া থেকে এসেছে), ইংরেজিতে Amazonian epoch. ১.৮ বিলিয়ন বছর পূর্ব থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই ইপকের সীমারেখা। এই যুগে স্বল্প সংখ্যক বিশালায়তন খাদের সৃষ্টি হয়েছে যার কারণ ছিল উল্কাপাত। কিন্তু এ সময় বিভিন্ন ধরণের অনেক কাঠামো তৈরী হয়েছে। এই সময়ই সৌর জগতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ অলিম্পাস মন্স সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এ সময়েই মঙ্গলের অন্যান্য স্থানে লাভার প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
[সম্পাদনা] জলবিজ্ঞান
বর্তমানে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ এতোটা কম যে এতে তরল পানি থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু মঙ্গলে বরফ রয়েছে। এর দুই মেরু সম্পূর্ণ বরফ দ্বারা গঠিত। ২০০৭ সালের মার্চে নাসা এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে যে পরিমাণ বরফ রয়েছে তা গলিয়ে দিলে সমগ্র গ্রহটি পানিতে ডুবে যাবে এবং এই জলভাগের গভীরতা হবে প্রায় ১১ মিটার (৩৬ ফুট)।[৬] উপরন্তু বরফের একটি পারমাফ্রস্ট ম্যান্ট্ল মেরু অঞ্চল থেকে ৬০° অক্ষাংশ এলাকা জুড়ে প্রলম্বিত রয়েছে।[৭] মঙ্গলের পুরু ক্রায়োস্ফেয়ারের অভ্যন্তরে আরও বিপুল পরিমাণ পানি লুকিয়ে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কোন আগ্নেয় বিস্ফোরণের মাধ্যমে ক্রায়োস্ফেয়ার ধ্বংস হলেই কেবল এই পানি বেরিয়ে আসতে পারে। এরকম একটি বিস্ফোরণ অনেক আগে হয়েছিল যার কারণে মঙ্গলের ভ্যালিস মেরিনারিস গঠিত হয়। ইতিহাসের এই সময়ে বিপুল পরিমাণ পানি বেরিয়েছিল যা একটি সুবৃহৎ নদী উপত্যকা গঠনের জন্য যথেষ্ট ছিল। আজ থেকে ৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে এরকম আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল যার কারণে সারবেরাস ফোসি নামক একটি খাদ উন্মুক্ত হয়েছিল। এর ফলে একটি বরফের সাগর সৃষ্টি হয়ে যা এখনও দেখা যায়। এই সাগরটিকে বর্তমানে এলিসিয়াম প্ল্যানিটিয়া বলা হয়।[৮]
অতি সম্প্রতি মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ারে অবস্থিত মার্স অরবিটার ক্যামেরার মাধ্যমে মঙ্গলের কিছু উচ্চ রিজল্যুশন ছবি তোলা হয়েছে। এর ফলে মঙ্গলের পৃষ্ঠতলে তরল পানির অস্তিত্বের ইতিহাস সম্বন্ধে অনেকটাই বিস্তারিত জানা গেছে। সেখানে বন্যা সৃষ্টকারী বিশালায়তন কিছু চ্যানেলের নিদর্শন পাওয়া গেছে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রচুর শাখা নদী সদৃশ প্রবাহের অস্তিত্বও প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এমন কোন ছোট আকৃতির গঠন পাওয়া যায়নি যাকে বন্যা সৃষ্টিকারী এই জলস্রোতের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। বর্তমানে অবশ্য এদের কোনটিই জীবিত নেই। আছে শুধু এদের নিদর্শন। আবহাওয়ার পরিবর্তনই এদের বিলুপ্তির কারণ বলে মনে করা হয়। এ থেকেই বোঝা যায়, এই গঠনগুলো কত পুরনো ছিল। আবার আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ এবং গভীর গিরিখাতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল জুড়ে বেশ কিছু গঠন বিভিন্ন চিত্রে ধরা পড়েছে যেগুলো অনেকটা পৃথিবীর সমুদ্র সন্নিবিষ্ট নিষ্কাশন নালী আকৃতির গিরিখাতের মত। এই গিরিখাতগুলো মঙ্গলের দক্ষিণ গোলার্ধের উঁচু অঞ্চলগুলোতে অবস্থিত। এদের মুখ বিষুবরেখার দিকে এবং সবগুলো ৩০° অক্ষাংশে মেরুমুখী হয়ে আছে।[৯] গবেষকরা এমন কোন গিরিখাত খুঁজে পাননি যেগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এমনকি পরষ্পর উপরিপাতিত কোন ইমপ্যাক্ট জ্বালামুখও খুঁজে পাননি। এ থেকে বোঝা যায় যে এই গঠনগুলো বেশ নবীন।
এই ছবিটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ রয়েছে। এখানে মোট দুইটি চিত্র রয়েছে যার একটি অপরটি থেকে ৬ বছর পরে তোলা। ছবিটি মূলত মঙ্গলের একটি উপত্যকার যাক দেখে অনেকটা নবীন পলির আস্তরণ মনে হচ্ছে। নাসার মঙ্গল অভিযান প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী মাইকেল মেয়ার দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, বিপুল পরিমাণ জলমিশ্রিত কোন ধরণের পদার্থের প্রবাহের মাধ্যমেই কেবল এ ধরণের রঙীন এবং ধ্বংসাবশেষ আকৃতির গঠনের সৃষ্টি হতে পারে। এই জল কি বায়ুমণ্ডল থেকে বর্ষিত তুষারপাত বা বৃষ্টি থেকে এসেছে নাকি ভূগর্ভস্থ কোন উৎস থেকে এসেছে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।[১০] অবশ্য এই ধ্বংসাবশেষের অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করার জন্য বিকল্প প্রকল্পও গৃহীত হয়েছে। এমন হতে পারে বরফ কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইড অথবা মঙ্গলীয় পৃষ্ঠে ধূলির প্রবাহের মাধ্যমে এই পলিবিশিষ্ট তলানীর সৃষ্টি হয়েছে।[১১][১২] এতদ্ব্যাতীত মঙ্গলে এমন কিছু খনিজ পদার্থ পাওয়া গেছে যা থেকে বোঝা যায় মঙ্গলে এক সময় তরল পানির অস্তিত্ব ছিল। এই পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে হেমাটাইট এবং goethite, যারা সাধারণত পানির উপস্থিতিতে গঠিত হয়।[১৩]
[সম্পাদনা] ভূগোল
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মঙ্গলের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য, মঙ্গলের পাহাড়সমূহের তালিকা, এবং মঙ্গলের আগ্নেয় জ্বালামুখসমূহের তালিকা
পৃথিবীর প্রথম অ্যারোগ্রাফার হিসেবে যাদের নাম করা হয় তারা হলেন Johann Heinrich Mädler এবং ভিলহেল্ম বিয়ার, যদিও কেবল চাঁদের মানচিত্র প্রণয়ন করার কারণেই তারা সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তারা প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন যে, মঙ্গলের প্রায় সকল কাঠামোই স্থায়ী। এর সাথে গ্রহটির ঘূর্ণনকালও নির্ণয় করেন। ১৮৪০ সালে Mädler তার ১০ বছরের গবেষণা একত্রিত করে মঙ্গলের প্রথম মানচিত্র প্রণয়ন করেন। মানচিত্রে বিভিন্ন স্থানকে নাম দ্বারা চিহ্নিত না করে ববয়ার এবং Mädler কেবল বিভিন্ন বর্ণ দিয়ে চিহ্নিত করেছিলেন। সে হিসেবে বর্তমানে মেরিডিয়ান উপসাগর (Sinus Meridiani) নামে পরিচিত কাঠামোটির জন্য a বর্ণটি নির্দিষ্ট করা হয়েছিল।[১৪]
বর্তমানে মঙ্গলের বিভিন্ন প্রাকৃতিক কাঠামোসমূহের নাম বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে রাখা হয়েছে। যে সকল কাঠামোসমূহের উচ্চ প্রতিফলন অনুপাত রয়েছে তাদের অধিকাংলেরই নাম পূর্বেরটি রয়ে গেছে। অবশ্য বেশ কিছু নামের বিভিন্ন দিক দিয়ে উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে যাতে পরে আবিষ্কৃত বিভিন্ন বিষয় নামের মাধ্যমেই বোঝা যায়। যেমন: নিক্স অলিম্পিকা (অলিম্পাসের তুষার) নামক পর্বতটির আধুনিক নাম হচ্ছে অলিম্পাস মন্স (অলিম্পাস পর্বত)।[১৫] মঙ্গলের বিষুবরেখা এর ঘূর্ণন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে, কিন্তু এর মূল মধ্যরেখা নির্দিষ্ট করা হয়েছে পৃথিবীর মত করেই। অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা একটি নির্দিষ্ট স্থানের উপর দিয়ে রেখাটি নিয়ে গেছেন। পৃথিবীতে যেমন গ্রিনিচ নামক স্থানকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। Mädler ও বিয়ার ১৮৩০ সালে তাদের প্রণীত প্রথম মানচিত্রে মঙ্গলের মূল মধ্যরেখা হিসেবে একটি রেখাকে চিহ্নিত করেছিলেন। ১৯৭২ সালে মেরিনাস ৯ মহাকাশযান মঙ্গলের বেশ কিছু উচ্চ রিজল্যুশনের ছবি পাঠায়। এগুলো থেকে দেখা যায় মঙ্গলের সাইনাস মেরিডিয়ানি নামক সাগরের (তরল পানির সাগর নয়) উপর এয়ারি-০ নামক একটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ রয়েছে। পরবর্তীতে এই জ্বালামুখটিই ০.০° অক্ষাংশে রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। এই জ্বালামুখটি এর আগে নির্বাচিত মূল মধ্যরেখার উপর অবস্থিত। অর্থাৎ পৃথিবীর যেমন গ্রিনিচ মঙ্গলের তেমনি এয়ারি-০।
মঙ্গলে যেহেতু কোন মহাসাগর বা সমুদ্র নেই সেহেতু সেখানকার বিভিন্ন উচ্চতা নির্ণয়ের জন্য একটি শূন্য-উচ্চতার পৃষ্ঠতল ধরে নিতে হবে যাকে অনেক সময় গড় অভিকর্ষীয় পৃষ্ঠ বলা হয়। মঙ্গলের যে উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পরিমাণ ৬১০.৫ প্যাসকেল (৬.১০৫ মিলিবার) সে উচ্চতাকে শূন্য উচ্চতা ধরা হয়। এই চাপের পরিমাণ মঙ্গলে পানির ত্রৈধ বিন্দুর চাপের সমান। এই চাপ পৃথিবীতে সমুদ্র পৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ০.৬%।[১৬]
[সম্পাদনা] জীবন
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মঙ্গল গ্রহে জীবন
বর্তমান গবেষণায় এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে, গ্রহীয় বাসযোগ্যতা তথা একটি গ্রহে প্রাণের বিকাশ ঘটার সম্ভবনার পরিমাণ বহুলাংশে এর পৃষ্ঠতলে পানির অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে। এই শর্তটি পূর্ণ করার জন্য গ্রহটিকে অবশ্যই বাসযোগ্য অঞ্চলে থাকতে হবে। বর্তমানে সূর্যের বাসযোগ্য অঞ্চলের ভিতর পৃথিবী অবস্থান করছে। কিন্তু মঙ্গল গ্রহ এই অঞ্চল থেকে মাত্র অর্ধেক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক দূরে অবস্থিত। এ কারণে এর পৃষ্ঠতলের সব পানি জমে যায়। কিন্তু মঙ্গলে যে একসময় পানির প্রবাহ ছিল তার প্রমাণ বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে পাওয়া গেছে।
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- ↑ David R. Williams (September 1, 2004). Mars Fact Sheet. National Space Science Data Center. NASA. Retrieved on 2006-06-24.
- ↑ Peplow, Mark. How Mars got its rust. Retrieved on 2007-03-10.
- ↑ NASA Mars Page. Volcanology of Mars. Retrieved on 2006-06-13.
- ↑ Goddard Space Flight Center. New Map Provides More Evidence Mars Once Like Earth. Retrieved on 2006-03-17.
- ↑ Dave Jacqué. "APS X-rays reveal secrets of Mars' core", Argonne National Laboratory, 2003-09-26. Retrieved on 2006-07-01. (written in English)
- ↑ Mars' South Pole Ice Deep and Wide. NASA: (March 15, 2007). Retrieved on 2007-03-16.
- ↑ Kostama et al., V. P. (June 3, 2006), "Recent high-lattitude icy mantle in the northern plains of Mars: Characteristics and ages of emplacement", Geophysical Research Letters 33: L11201. Retrieved on 2007-03-11
- ↑ Murray et al., John B. (March 17, 2005), "Evidence for a frozen sea close to Mars' equator", Nature 434: 352-355. Retrieved on 2007-03-11
- ↑ Malin, Michael C. (June 30, 2000). "Evidence for Recent Groundwater Seepage and Surface Runoff on Mars". Science 288: 2330-2335.
- ↑ NASA Images Suggest Water Still Flows in Brief Spurts on Mars. NASA: (December 6, 2006). Retrieved on 2006-12-06.
- ↑ Water flowed recently on Mars. BBC: (December 6, 2006). Retrieved on 2006-12-06.
- ↑ "Water May Still Flow on Mars, NASA Photo Suggests", NASA, December 6, 2006. Retrieved on 2006-04-30.
- ↑ NASA (March 3, 2004). Mineral in Mars 'Berries' Adds to Water Story. Press release. Retrieved on 2006-06-13.
- ↑ Sheehan, William. Areographers. The Planet Mars: A History of Observation and Discovery. Retrieved on 2006-06-13.
- ↑ Viking and the Resources of Mars. Humans to Mars: Fifty Years of Mission Planning, 1950–2000. Retrieved on 2007-03-10.
- ↑ Topography. Think Quest. Retrieved on 2007-03-13.
[সম্পাদনা] আরও দেখুন
- মঙ্গলের কৃত্রিম বস্তুসমূহের তালিকা
- মঙ্গল গ্রহে জীবন
- বহির্জাগতিক প্রাণ
[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ
- নাসা ওয়ার্ল্ড ওয়াইন্ডে মঙ্গলের ত্রিমাত্রিক চিত্র
- Google Mars Interactive image of Mars
- Flight Into Mariner Valley NASA/JPL/Arizona State University 3D flythrough of Valles Marineris
- Marsgeo.com Mars Rover photos, videos & surface geology
- Nine Planets Mars page
- On Mars: Exploration of the Red Planet 1958-1978 from the NASA History Office.
- Martian Law - a CATO white paper
- Computer Simulation of a flyby through Mariner Valley
- Mars Unearthed - Comparisons of terrains between Earth and Mars
- Ralph Aeschliman's Online Atlas of Mars
- Geody Mars World's search engine that supports NASA World Wind, Celestia, and other applications.
- BBC News update on Mars Express' findings of polar water ice and water-eroded features on the surface
- BBC News Mars pictures reveal frozen sea
- Be on Mars Anaglyphs from the Mars Rovers (3D)
- 04/02/07: ESA Prepares for a Human Mission to Mars
- NASA/JPL OnMars WMS Server for Mars Data
- Exploring Mars: Image Center
![]() |
||||||
সূর্য • সৌর গোলক সৌর আবরণ হেলিওপজ হাইড্রোজেন দেয়াল |
গ্রহসমূহ ☾ = চাঁদসমূহ ∅ = বলয়সমূহ |
বুধ | শুক্র | পৃথিবী ☾ | মঙ্গল ☾ | |
বৃহস্পতি ☾ ∅ | শনি ☾ ∅ | ইউরেনাস ☾ ∅ | নেপচুন ☾ ∅ | |||
বামন গ্রহসমূহ | সেরেস | প্লুটো ☾ | এরিস ☾ | |||
ক্ষুদ্র সৌর জাগতিক বস্তুসমূহ |
গ্রহাণু (ক্ষুদ্র গ্রহ) |
গ্রহাণু শ্রেণী ও পরিবার: ভালকানয়েডসমূহ · পৃথিবীর নিকটবর্তী গ্রহাণু · গ্রহাণু বেষ্টনী বৃহস্পতি ট্রোজানসমূহ · সেন্টাউর · নেপচুন ট্রোজান · গ্রহাণু চাঁদ · উল্কা |
||||
আরও দেখুন: গ্রহাণুসমূহের তালিকা, অর্থ এবং গ্রহাণুসমূহের নামের উচ্চারণ. | ||||||
নেপচুন- উত্তর |
কুইপার বেষ্টনী – প্লুটিনো: অরকাস · ইক্সিয়ন – Cubewano: ২০০২ ইউএক্স২৫ · ভারুনা · ১৯৯২ কিউবি১ · ২০০২ টিএক্স৩০০ · ২০০৩ ইএল৬১ · কোয়াওর · ২০০৫ এফওয়াই৯ · ২০০২ এডব্লিউ১৯৭ |
|||||
বিক্ষিপ্ত চাকতি: ২০০২ টিসি৩০২ · ২০০৪ এক্সআর১৯০ · সেডনা | ||||||
ধূমকেতু | পর্যাবৃত্ত এবং অপর্যাবৃত্ত ধূমকেতুসমূহের তালিকা · ডেমোক্লয়েড · উওর্ট মেঘ | |||||
আরও দেখুন: জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু, সৌর জগতের বস্তুসমূহের তালিকা, যার ভিত্তি হচ্ছে; ব্যাসার্ধ্য অথবা ভর, এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রবেশদ্বার |