সিতারা বেগম
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডঃ ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর প্রতীক উপাধিতে ভুষিত হন ।
সিতারা ১৯৪৫ সালে কলকাতা শহরে জন্মগ্রহন করেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের ভেতর তিনি ছিলেন তৃতীয় ।তাঁর বাবা মোঃ ইসরাইল মিয়া পেশায় ছিলেন আইনজীবী। তাঁর সাথে কিশোরগঞ্জে সিতারা বেগম শৈশব কাটান।সেখান থেকে মেট্রিক পাশ করার পর হলিক্রস কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করার পর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেনামেডিকেলে (Army Medical) লেফটেন্যান্ট হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭০ সালের উত্তাল দিনগুলোতে সিতারা বেগম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়োজিত ছিলেন। সেই সময় তাঁর বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা মেজর এ,টি,এম,হায়দার পাকিস্তান থেকে কুমিল্লায় বদলি হয়ে আসেন। তিনি কুমিল্লার ৩য় কমান্ডো ব্যাটেলিয়নে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারীতে সিতারা ও তার ভাই হায়দার ঈদের ছুটি পালন করার জন্য তাদের কিশোরগঞ্জের বাড়িতে যান।কিন্তু সেই সময়ে দেশ জুড়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।হায়দার তার বোনকে ক্যান্টনমেন্টে আর ফিরে না যাবার জন্য বলেন।পরবর্তিতে তিনি তার বোন সিতারা ,বাবা-মা ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পার্শবর্তী দেশ ভারতে পাঠান।কিশোরগঞ্জ থেকে মেঘালয়ে পৌছাতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য সেখানে বাংলাদেশ মেডিকেল (The Bangladesh Medical)নামে প্রায় ৪০০ শয্যার একটি হাসপাতাল ছিলো। ঢাকা মেডিকেলের শেষ বর্ষের অনেক ছাত্র সেখানে ছিলো।ক্যাপ্টেন ডঃ সিতারা সেক্টর-২ এর অধীনে সেখানের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। তাঁকে নিয়মিত আগরতলা থেকে ঔষধ আনার কাজ করতে হতো। হাসপাতালে একটি অপারেশন থিয়েটার ছিলো।যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা,বাঙালী ছাড়াও সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লোক জন চিকিৎসাসেবা নিত। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর ডঃ সিতারা রেডিওতে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার সংবাদ শুনে ঢাকা চলে আসেন।পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে তাঁর ভাই মেজর হায়দায় খুন হলে ডঃ সিতারা ও তাঁর পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে থাকা শুরু করেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্যাপ্টেন ডঃ সিতারা বেগমের অবদানের জন্য তৎকালীন সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভুষিত করে।