মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কুদরাত-এ-খুদার একটি পোর্ট্রেট
কুদরাত-এ-খুদার একটি পোর্ট্রেট

ড.কুদরাত-এ-খুদা (ডিসেম্বর ১, ১৯০০ - নভেম্বর ৩, ১৯৭৭) ছিলেন একজন বাংলাদেশী রসায়নবিদ, গ্রন্থকার এবং শিক্ষাবিদ।

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] জীবনী

কুদরাত-এ-খুদা ১৯০০ সালের ডিসেম্বর ১ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মাড়গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেম। তার পিতা খোন্দকার আব্দুল মুকিদ, মাতা ফাসিহা খাতুন

ড.কুদরাত-এ-খুদার শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাড়গ্রাম এম.ই. স্কুলে। পরবর্তীতে তিনি চলে আসেন কলিকাতা উডবার্ন এম.ই.স্কুলে এবং কলিকাতা মাদ্রাসায়। কলিকাতা মাদ্রাসা থেকে তিনি ১৯১৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপর তিনি ভর্তি হন বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকেই তিনি ১৯২৫ সালে রসায়নে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে এম.এস.সি পাশ করেন। পাশ করার পর তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড পাড়ি জমান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে 'Stainless Configuration of Multiplanmet Ring' বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি ১৯২৯ সালে রসায়নে ডি.এসসি. ডিগ্রী লাভ করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

ড.কুদরাত-এ-খুদা ১৯৩১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি এ কলেজে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৯৪২ সালে ইসলামিয়া কলেজে অধ্যক্ষ হন এবং ১৯৪৬ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। দেশ বিভাগের পর ড.কুদরাত-এ-খুদা পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং জনশিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব নেন(১৯৪৭-১৯৪৯) । অতঃপর তিনি পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োজিত হন। ১৯৫২-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষনাগার সমূহের পরিচালক ছিলেন। ১৯৬৩ সালে চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য যে শিক্ষাকমিশন গঠন করা হয় ড.কুদরাত-এ-খুদা তার সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট প্রণীত হয়।

ড.কুদরাত-এ-খুদা ১৯৭৭ সালের নভেম্বর ৩ ঢাকায় মৃত্যু বরন করেন।

[সম্পাদনা] গবেষণা

ড.কুদরাত-এ-খুদা স্টেরিও রসায়ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অনান্য খনিজ পদার্থ। বিজ্ঞানী হিসাবে তাঁর ও তাঁর সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৯টি পাটসংক্রান্ত। এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য। দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষ্ণামূলক পত্রিকায় তাঁর রচিত প্রায় ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

[সম্পাদনা] শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন

প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উপযোগী সমাজগঠনমূলক একটি সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার রুপরেখা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৭২ সালের জুলাই ২৬ গঠিত 'জাতীয় শিক্ষা কমিশন' প্রণীত সুপারিশমালা। এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন ড. কুদরাত-এ-খুদা। তাঁর নাম অনুসারে পরবর্তীকালে রিপোর্টির নাম রাখা হয় ' ড.কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট'। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালের মে মাসে ' বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট' নামে। এতে পরিশিষ্ট বাদে ৩৬ টি অধ্যায় ছিল এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল মোট ৪৩০।

[সম্পাদনা] রচনাবলী ও প্রকাশনা

  • বিজ্ঞানের সরস কাহিনী
  • বিজ্ঞানের বিচিত্র কাহিনী
  • বিজ্ঞানের সূচনা
  • জৈব-রসায়ন (৪ খন্ড)
  • পূর্ব-পাকিস্তানের শিল্প সম্ভাবনা
  • পরমাণু পরিচিতি
  • বিজ্ঞানের পহেলা কথা
  • যুদ্ধোত্তর বাংলার কৃষি ও শিল্প
  • বিচিত্র বিজ্ঞান
  • পবিত্র কোরআনের পূত কথা
  • অঙ্গারী জওয়ারা

[সম্পাদনা] সাময়িকী

  • পুরোগামী বিজ্ঞান (১৯৬৩)
  • বিজ্ঞানের জয়যাত্রা (১৯৭২)

[সম্পাদনা] সন্মাননা