কিওক্রাডাং
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কেওক্রাডাং (কিওকারাডং নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা বান্দরবনে অবস্থিত। এক সময় এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ছিল। আধুনিক গবেষণায় এই তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তাজিং ডং। অবশ্য এখনও অনেক নির্ভরযোগ্য সূত্রে কেওক্রাডাংকে সর্বোচ্চ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যা সম্পূর্ণ ভুল। এমনকি বাংলাদেশের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক এবং সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে এখনও একে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] অবস্থান ও উচ্চতা
কিওক্রাডাং বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত। অর্থাৎ বান্দরবনেরও দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। এর ভৌগলিক স্থানাংক হচ্ছে । এক সময় যখন একে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মনে করা হতো তখন এর উচ্চতা পরিমাপ করা হয়েছিল ১২৩০ মিটার।[১] কিন্তু অধুনা এসআরটিএম উপাত্ত এবং জিপিএস গণনা থেকে দেখা গেছে এর উচ্চতা ১০০০ মিটারের বেশী নয়। এই পরিমাপ রাশিয়া কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে। শৃঙ্গের শীর্ষে সেরাবাহিনী কর্তৃক উৎকীর্ণ যে ফলক দেখা যায় তাতে এর উচ্চতা লেখা হয়েছে ৩১৭২ ফুট। জিপিএস সমীক্ষায় উচ্চতা পাওয়া গেছে ৯৭৪ মিটার (৩১৯৬ ফুট)। এই পরিমাপটি রাশিয়ান পরিমাপের সাথে খাপ খায়। এসআরটিএম উপাত্ত এবং মানচিত্রের মাধ্যমে এই পরিমাপ করা হয়েছে। অবশ্য বর্তমানে রাশিয়ান এসআরটিএম উপাত্ত এবং ইউএসজিএস-এর মাধ্যমে দাবী করা হচ্ছে কেওক্রাডাং-এর প্রকৃত অবস্থান এটি নয় (উপরে উল্লেখিত ভৌগলিক স্থানাংকে নয়)। তারা এ স্থান থেকে আরও উত্তরে কেওক্রাডাং-এর অবস্থান সনাক্ত করেছে এবং এর উচ্চতা ৮৮৩ মিটার পরিমাপ করেছে।[২]
[সম্পাদনা] নামকরণ
[সম্পাদনা] আরোহণের পথ ও পর্যটন সুবিধাদি
কেওক্রাডাং যে উপজেলায় অবস্থিত অর্থাৎ রুমা, তা বাংলাদেশের অন্যতম দূরবর্তী ও দুর্গম জেলা। বান্দরবন শহর থেকে স্থানীয় এক ধরণের জিপে চড়ে শংখ নদীর ধার পর্যন্ত পৌঁছানোর পর, এ নদী হয়েই রুমা পৌঁছাতে হয়। রুমা যাবার জন্য স্থানীয় যন্ত্রচালিত নৌকা তথা লঞ্চ রয়েছে যেগুলো সাধারণত বেশ সরু হয়ে থাকে। রুমা থেকেই কেওক্রাডাং যাত্রা শুরু হয়। রুমা একেবারে ছোট একটি উপজেলা। সামান্য কিছু ঘরবাড়ি দেখা যায় যেখানে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর বসবাস। এছাড়া কিছু সরকারী দালান রয়েছে। রুমা বাজারে মায়ানমার থেকে আসা দ্রব্যাদীর সমাহার চোখে পড়ে। সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভিড় পরীলক্ষিত হয়।
যারা কেওক্রাডাং যেতে চান তারা সাধারণত এখান থেকে হেঁটে বগা হ্রদে যান। সেখানে রাত্রি যাপনের পর পরদিন ভোরে কেওক্রাডাংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। বগা লেক থেকে কেওক্রাডাং যাবার দুটি পথ রয়েছে, একটি গাড়ির পথ, এই পথ দিয়ে বছরে তিন মাসের মত গাড়ি চলাচল করে। তবে আবহাওয়াগত প্রতিকূলতার কারণে অন্যান্য সময় এই পথ দিয়ে যাতায়াত কষ্টসাধ্য। সবচেয়ে প্রচলিত পথটির নাম ঝিরিপথ। ভোরে বগা লেক থেকে হাঁটা শুরু করলে এই পথ ধরে দুপুড় নাগাদ কেওক্রাডাং শীর্ষে পৌঁছানো যায়। তারপর সন্ধ্যার আগেই আবার শীর্ষ থেকে বগা লেকে ফিরে আসা যায়। অধিকাংশ পর্যটকরাই এই পথ অনুসরণ করে থাকেন। স্থানীয় লোকজন পর্যটকদের সাহায্য করে থাকে। তাদেরকে টুর গাইড হিসেবে সাথে নেয়া যায়। এই যাত্রায় মোট তিনদিন সময় লাগে। এর মধ্যে দুই দিন দুই রাত স্থানীয় বম উপজাতীয় লোকদের আতিথ্য গ্রহণ করতে হয়। তারা পর্যটকদের জন্য রেস্ট হাউস ভাড়া দিয়ে থাকে। এই বমরা অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। বমদের সাথে পর্যটকদের আন্তরিকতা চোখে পড়ার মত।
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- ↑ CIA: the World Factbook
- ↑ http://www.viewfinderpanoramas.org/drg/tazingdong.jpg - রাশিয়ান ম্যাপিংয়ের মানচিত্র।
[সম্পাদনা] আরও দেখুন
- তাজিং ডং
- মৌদুক মুয়াল
[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ
- www.viewfinderpanoramas.org - রাশিয়ান ম্যাপিংয়ের চিত্র।
- মো: মাহবুবুল আমিন মজুমদারের লেখায় কেওক্রাডাং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা