আইজাক বাবেল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আইজাক বাবেল (১৮৯৪-১৯৪০) একজন রুশ ছোটগল্পকার ও সাংবাদিক। তাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প লেখকদের অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়।

[সম্পাদনা] প্রথম জীবন

আইজাক বাবেল ১৮৯৪ সালে ক্রিমিয়ার ওডেসা শহরে এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। সেসময় রাশিয়াতে ইহুদি বিদ্বেষ এবং নির্যাতন ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ১৯০৫ সালের নিধনযজ্ঞে (pogrom) তার এক পূর্বপুরুষ নিহত হন।

বাবেল ছোটবেলায় ধর্ম, সংগীত ও ফরাসী ভাষা-সাহিত্যে দিক্ষা লাভ করেন। বড় হয়ে কিয়েভ চলে যান হিসাববিজ্ঞান ও বাবসা শিক্ষা ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করতে। সেখানে হবু স্ত্রী ইয়েভ্‌গেনিয়ার সাথে পরিচয় হয়। ১৯১৫ সালে ডিগ্রী লাভ করে তিনি চলে যান পেত্রোগ্রাদে, ইহুদিদের চলাফেরার উপর সরকারী বাধানিষেধ অমান্য করে। প্রখ্যাত লেখক গোর্কির সাথে তার সখ্যতা হয়। গোর্কি তার সাহিত্য পত্রিকায় বাবেলের দুটি ছোটগল্প ছাপেন এবং তাকে উপদেশ দেন বাস্তব জীবন থেকে আরো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে।

১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবে সমগ্র দেশ তোলপাড় হয়। বাবেল এই অস্থির সময়ে রোমানিয়াতে যুদ্ধে অংশ নেন, ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হন এবং ওডেসা ও পিটার্সবুর্গে বলশেভিকদের পক্ষে কাজ করেন। ১৯১৯ সালে ইয়েভ্‌গেনিয়া-কে বিয়ে করেন।

[সম্পাদনা] লাল সওয়ার

লাল সওয়ার, ইংরেজী সংস্করন
লাল সওয়ার, ইংরেজী সংস্করন

১৯২০ সালে সেমিয়োন বুদিয়োন্নি-র অশ্বারোহী সৈন্যদলের সাথে তিনি পোল্যান্ডে প্রবেশ করেন প্রতিবেদক ও প্রচারকের (propagandist) ভূমিকায়। তার ছদ্মনাম দেয়া হয় কিরিল লিউতোভ্‌। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ভেতর দিয়ে কস্যাক্‌ ঘোড়সওয়ারদের সেই বর্বরোচিত অভিযান বাবেল অমর করে রেখে গেছেন তার লাল সওয়ার (Red Cavalry) গল্পগুচ্ছে।

লাল সওয়ার বই আকারে ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয়। তার আগে মায়াকোভ্‌স্কি কয়েকটি গল্প তার পত্রিকায় ছাপেন। বুদিয়োন্নি সহ অন্যান্য প্রভাবশালী লোকজন বাবেলের উপর নাখোশ হলেও গোর্কির ছত্রছায়ায় বইটি প্রকাশিত হয় এবং কয়েকটি ভাষায় অনুদিত হয়। বিশের দশকে বাবেলের ছোটগল্প তাকে ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয়। এসময় তার স্ত্রী ফ্রান্সে পাড়ি জমান।

[সম্পাদনা] পরবর্তী জীবন

ত্রিশের দশক গোড়াতে বাবেল লিখেন ওডেসা-র গল্প (Odessa Tales)। স্ত্রীকে দেখতে তিনি কয়েকবার ফ্রান্সে যাতায়াত করেন। ১৯৩৫ সালে শেষবারের মতো ইয়েভ্‌গেনিয়ার সাথে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং তিনি আন্তোনিয়া পিরোজ্‌কোভার সাথে সংসার শুরু করেন।

এ সময়ে তিনি ধীরে ধীরে জনজীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বাবেল বলশেভিক সরকারের চাটুকারিতা করতে অস্বীকার করেন। এতে স্টালিন তার বিরুদ্ধে ক্রমশ বৈরীভাবাপন্ন হতে থাকেন।

১৯৩৬ সালে গোর্কির অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর বাবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে এর পর তার পালা। ১৯৩৯ সালে অবশেষে তিনি গ্রেফতার হন। স্টালিনের মহাশুদ্ধিকরন (Great Purge) অভিযান ততদিনে সমগ্র রাশিয়াতে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। বাবেলকে কুখ্যাত লুবিয়াংকা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে অত্যাচার করা হয়। ১৯৪০ সালের জানুয়ারী মাসে গোপনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

১৯৫৪ সালের আগে পর্যন্ত আন্তোনিয়া বাবেলের পরিণতি জানতে পারেননি। সে বছর সোভিয়েত সরকার তাকে মরণোত্তর পুনর্বাসন প্রদান করে। বিগত কয়েক দশকে বাবেলের সাহিত্যমর্যাদা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।