সুন্নী ইসলাম
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এই নিবন্ধটি একটি ধারাবাহিক নিবন্ধ শ্রেণীর অংশ যার বিষয় হল |
বিশ্বাস ও অনুশীলন |
সৃষ্টিকর্তার একত্ব |
প্রধান ব্যক্তিত্ব |
হযরত মুহাম্মদ (সা:) |
গ্রন্থ ও আইন |
কুরআন • হাদীস • শরীয়ত |
ফিরকাহ |
সামাজিক বিষয়াদি |
শিক্ষা • দর্শন |
আরও দেখুন |
ইসলামী শব্দকোষ |
সুন্নী মুসলিমরা ইসলাম অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্প্রদায়। তাদেরকে আহলাস-সুন্নাহ-ওয়াল-জামাহ নামে ও ডাকা হয় যা নির্দেশ করে যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সুন্নী শব্দের উৎপত্তি সুন্নাহ শব্দ থেকে যা দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর বাণী ও কর্মকে বুঝায়। তারা ইসলামের সেই অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হওয়া খলিফা আবু বকরকে মেনে নিয়েছিল। তাই প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় ( খিলাফত) নির্বাচন বা ‘শুরা’ সুন্নী ইসলামের একটা বড় বৈশিষ্ট্য। অধিকাংশ সুন্নী আইনজ্ঞরা নিজেদের পরিচয় দিতে চান সেই মুসলিম হিসেবে যাদের মূল গ্রন্থিত আছে সুন্নী আইনের চারটি ঘরানার (হানাফি, মালিকি, শাফি, হানবালি) যেকোনো একটিতে।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জনসংখ্যা
মুসলিম জনসংখ্যার কত অংশ কোন প্রধান ধারার সাথে যুক্ত আছে তা নির্ণয় করা পরিসংখ্যানবিদদের কাছে বেশ কষ্টকর ছিল। যেমন, শিয়া সুন্নী সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য অনেক দেশেই পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। যখন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না তখন দেশটিকে সুন্নী তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবুও বিভিন্ন সুত্র ব্যবহার করে একজন মোটামুটি এই অনুমানে পৌছাতে পারে যে শিয়ারা মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১০-১৫%। যদিও আরেকটি গ্রহনযোগ্য হিসেবে দেখা গেছে শিয়াদের মোট পরিমান ৭.৫%। [১] প্রকৃতপক্ষে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্যমতে শিয়াদের পরিমান মোট মুসলিম জনসংখ্যার এক-দশমাংশের ও কম।
[সম্পাদনা] সুন্নী মাযহাব
ইসলামী আইনকে শরিয়াহ বলা হয়। আর এই শরিয়াহ তৈরী হয় কুরআন ও সুন্নাহ্র ভিত্তিতে। যারা এই আইনসমুহের ব্যাখ্যা দেন তাদের মধ্যে পার্থক্য খুব কম বিষয়েই মতপার্থক্য আছে।
- হানাফি মাযহাব(আবু হানিফা কতৃক প্রতিষ্ঠিত)
তিনি ইরাকে জন্মগ্রহন করেন। অন্য মাযহাবগুলোর তুলনায় তার মাযহাবটিতে প্রজ্ঞা ও যুক্তির উপর অনেক বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ভারতবর্ষ ও তুরষ্কের মুসলিমরা এই মাঝহাবের অনুসারী।
- মালিকী মাযহাব(মালিক ইবনে আনাস কতৃক স্থাপিত)
মালিক ইবনে আনাস তার তত্বগুলি সুসংগঠিত করেন মদিনাতে যেখানে তার সাথে পরিচয় ঘটেছিলো হযরতের বেঁচে থাকা এক সাহাবির সঙ্গে। সমগ্র আফ্রিকা ( মিশর ব্যতিত) ও পুর্ব উপকুল জুড়ে এই মাযহাবের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।
- শাফি মাযহাব( মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ-শাফি কতৃক স্থাপিত)
আল শাফি একজন মধ্যপন্থী হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি প্রথমে ইরাকে ও পরে মিশরে শিক্ষা লাভ করেন। ইন্দোনেশিয়া ,মিশরের দক্ষিন ভাগ, মালয়শিয়া এবং ইয়েমেনে এই মাযহাবের অনুসারীদের দেখা মেলে।
- হানবালী মাযহাব(আহমেদ ইবনে হানবালী কতৃক স্থাপিত)
তিনি আল-শাফির শিষ্য ছিলেন। কিছু মতভেদের কারনে তার উপর অনেক নির্যাতন করা হয়। সৌদি আরবের আধুনিক ওয়াহাবিরা এই মতের অনুসারী বলে দাবী করে থাকেন।
এই চারটি মাযহাবের মধ্যে অল্প-বিস্তর পার্থক্য থাকলেও সুন্নীরা সব কয়টি পথকেই সঠিক মনে করেন। এই মাযহাবগুলো ছাড়াও আরো মাযহাব আছে যাদের অনুসারী সংখ্যা খুবই নগন্য কিংবা এরা কেউ বেঁচে নেই।
শরিয়াহ কে ব্যাখ্যা করে বিশেষ আইন প্রণয়নকে ফিকহ বলে। মাযহাব হলো একটা বিশেষ উপায়ে ফিকহকে ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা। এই ঘরানা গুলো বিশেষ কিছু প্রমাণ ( শাফী ও হানবালী ) কিংবা বিশেষ কিছু সাধারন নীতিমালা ( হানাফী ও মালিকী) এর উপর গুরত্ব আরোপ করে। যেহেতু এই মাযহাব গুলো শরিয়াহ ব্যাখ্যা করার পদ্ধতিগত ভিন্নতা নির্দেশ করে,তাই প্রতিটি ধারাতেই কিছু না কিছু ফারাক আছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন নতুন ফিকহ আইন তৈরী হয়। যেমন একসময় তামাক পানে অনুৎসাহিত করা হতো এর উৎকট্ গন্ধের কারণে কিন্তু পরবর্তীতে গবেষণায় এর খারাপ দিকগুলো উন্মোচিত হওয়ায় এটিকে এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবৈধ সফটওয়ার ব্যবহারের মত বিষয়গুলো ও এখন বর্তমান ফিকহ সংক্রান্ত আলোচনায় উঠে আসছে। ফলাফল হল শরিয়াহ অপরিবর্তিত থাকলেও ফিকহ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে।
একটি মাযহাবের সাথে ধর্মীয় উপদলকে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। একটি বড় মুসলিম জনগোষ্ঠীতে চারটি মাযহাবের অনুসারী চিন্তাবিদই থাকতে পারে। এটা সম্পুর্ণ লোকজনের ব্যপার যে তারা কোনটা পছন্দ করবে।অনেক সুন্নী মনে করেন যে একজন মুসলিমের শুধুমাত্র একটি মাযহাবই অনুসরণ করা উচিত। যদিও ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে অন্য মাযহাব থেকেও বিধান নেওয়া যেতে পারে। কিছু সুন্নীরা আবার কোনো মাযহাবই অনুসরণ করেন না। যেমন সালাফীরা বিশেষ কোনো মাযহাবই মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানায়, তারা শুধু কোরান আর সুন্নাহ অনুসরণে পছন্দ করে।
[সম্পাদনা] সুন্নী ধর্মতাত্ত্বিক ঐতিহ্য
কোরান সরাসরি উত্তর দেয় না এমন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন মুসলিম চিন্তাবিদগণ, বিশেষ করে স্রষ্টার প্রকৃতি,মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা আছে কিনা ইত্যাদি দার্শনিক প্রশ্ন কিংবা কোরানের চিরস্থায়ীত্ব। ধর্মতত্ব ও দর্শনের বিভিন্ন মতানুসারীগণ বিভিন্ন ভাবে এই প্রশ্নের জবাব দিতে চেষ্টা করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধর্মতাত্বিক ব্যাখ্যাগুলো হলোঃ
- আশ-আরী,যা কিনা আবু আল-হাসান আশ-আরি কতৃক স্থাপিত। এই ব্যাখ্যাগুলো আল -গাজ্জালী কতৃক বেশ সমাদৃত হয়।
- এই ধর্মতত্ত্বে মরমী জ্ঞানকে প্রজ্ঞার উপর স্থান দেওয়া হয়।তাদের মতে নৈতিক নিয়মসমুহ মানবিক প্রজ্ঞা থেকে তৈরি করা যায় না,বরং স্রষ্টার নির্দেশ,যেমনটা কোরানে উল্লেখিত,এবং হয্রত মুহাম্মদ(স) এর জীবনাদর্শ (সুন্নাহ)-ই হলো সকল প্রকার নৈতিকতার উৎস।
-
- স্রষ্টার প্রকৃতি সম্পর্কে তারা মুতাজ্জিলাতদের অবস্থানকে বর্জন করে(যে তত্ব মতে কোরানে স্রষ্টা সংক্রান্ত সকল ভৌত গুণ রূপক)।[২] আশ-শারীরা জোর দেয় যে বরং এই সকল গুণ সঠিক, কারণ কোরান ভুল হতে পারে না, তবে স্রষ্টার উপর মোটা দাগের নরত্ব আরোপ করে এগুলো উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
-
- আশ-শারীরা মানবীয় স্বাধীন ইচ্ছার বিপরীতে স্রষ্টার সর্বময় ক্ষমতার উপর জোর দেয়। তারা বিশ্বাস করে যে কোরান স্বর্গীয় এবং তা অনাদিকাল থেকে বিদ্যমান।
- মাতুরিজ্জী (আবু মনসুর আল-মাতুরিজী কতৃক স্থাপিত) যতদিন পর্যন্ত না মধ্য এশিয়ার তুরস্কের( যারা আগে আশ-শারী ও আল- শাফীর অনুসারী ছিল) গোষ্ঠীগুলো এই ধারণা গ্রহন করে ততদিন পর্যন্ত এই মতবাদের অনুসারীরা খুবই সংখ্যালঘু ছিল। গোষ্ঠীগুলোর মধ্য একটি হল সেলজুক তুর্ক,যারা তুরস্কে চলে গিয়েছিলো,যেখানে কিনা পরবর্তীতে ওসমানিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৩] তাদের প্রতিষ্ঠিত আইনী ব্যবস্থা গোটা সাম্রাজ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।
- মাতুরিজ্জীরা দাবি করত যে স্রষ্টার অস্তিত্ব মানবীয় প্রজ্ঞা থেকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
- আতারিয়াহ বা হানবালী, নির্দিষ্ট কোন প্রচারকারীর নাম পাওয়া যায় না,তবে ইমাম আহমেদ ইবনে হানবালী এই মতবাদ গুলো সজীব রাখার ব্যাপারে ঐতিহাসিক ভুমিকা রেখেছেন।
[সম্পাদনা] হাদীসের প্রতি সুন্নী দৃষ্টিভঙ্গি
যে কোরান আজ আমরা দেখি সেটা আনুমানিক ৬৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে সাহাবীদের দ্বারা সংকলিত হয় এবং তা সমগ্র মুসলিমদের দারা স্বীকৃত হয়। তৎকালীন আরবরা দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক কিছুর সম্মুক্ষীন হত যেগুলো সরাসরি কোরানে ছিল না। এক্ষেত্রে তারা হজরত মুহাম্মদ (স) ও তার সাহাবীদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করত।হযরত মুহাম্মদ (স) এর এই জীবনাদর্শ ( বাণী ও কর্ম ) কে হাদীস বলা হয়। মুসলিম চিন্তাবিদরা এই সকল হাদীসের বর্ণনাকারীদের ধারা অনুসরন করে ও তাদের বিশস্ততা যাচাই করে হাদীসের গ্রহনযোগ্যতা নির্ধারন করে থাকেন। সুন্নীরা বুখারী ও মুসলিম নামে দুটি হাদীসগ্রন্থকে বাকিগুলোর তুলনায় অধিকতর গ্রহনযোগ্য মনে করে। যদিও ছয়টি হাদিস সংগ্রহ মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরত্ব বহন করে।এগুলো হল -
- সহীহ আল বুখারী
- সহীহ মুসলিম
- সুনান আন-নাসাই
- সুনান আবু দাউদ
- সুনান আত-তিরমিযী
- সুনান ইবনে মাযাহ
এছাড়া ও আরো কিছু কম পরিচিত হাদীস সংকলন বিদ্যমান।যেমন-
- ইমাম মালিক এর মুয়াত্তা
- আহমেদ ইবনে হানবাল এর মুসনাদ
- সহীহ ইবনে খুযায়মাহ
- আল হাকীম এর মুস্তাদারাক
- আবদ আল- রাজ্জাক এর মুসান্নাফ
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- ↑ "How Many Shia Are in the World?". IslamicWeb.com. Retrieved on 2006-10-18.
- ↑ Bülent Þenay. Ash'ariyyah Theology, Ashariyyah. 'BELIEVE Religious Information Source'. Retrieved on 2006-04-01.
- ↑ Maturidiyyah. 'Philtar'. Retrieved on 2006-04-01.
[সম্পাদনা] বহির্সংযোগ
- Al-Azhar University, Cairo
- International Islamic University, Islamabad
- Islamic Law Infobase
- Philosophia Islamica
- University of Southern California, Compendium of Muslim Texts
- Fiqh al-Akbar by Imam Abu Hanifah
- Islaam
- Islam Guide
- Islam Online
- Islamic City
- The Islam Page
- Muwatta by Imam Malik
- Searchable Ar-Risala by Imam Shafi'i
- Foundations of the Sunnah, by Imam Ahmad ibn Hanbal
- Source Methodology in Islamic Jurisprudence (Usul al-Fiqh), by Taha Jabir Al 'Alwani
- Sunni Path