থেলিস
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
থেলিস বা মিলেতোসের থেলিস (প্রাচীন গ্রিক Θαλῆς ὁ Μιλήσιος থাল্যাস্ হো মিল্যাসিওস্) প্রাচীন গ্রীক গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা এবং দর্শনের জনক হিসেবে নন্দিত। তিনি এশিয়া মাইনরের একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রাচীন গ্রীসের ৭ জ্ঞানী ব্যক্তির একজন যাদেরকে সোফি বলা হয়।
- জন্মঃ ইতিহাসবেত্তা ডায়োকেনিস লিরটিয়াস এর মতে ৩৯তম অলিম্পিয়াডের সময় অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এশিয়া মাইনরের মিলেটাস নামক স্থানে।
- মৃত্যুঃ ৫৮তম অলিম্পিয়াডের সময় অর্থাৎ ৫৪৮ থেকে ৫৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝে কোন এক সময়। তখন তার বয়স ছিল ৭৮ বছর।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জীবনী
থেলিস ব্যবসা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় সফর করার সৌভাগ্য লাভ করেন এবং এর দ্বারা ব্যপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। মিশর ভ্রমনের সময় সেখানকার পুরোহিতদের কাছে তিনি জ্যামিতি শিখেন এবং তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মিশরীয় জ্যামিতিবিদ্যা গ্রীসে নিয়ে আসেন। মিশরীয় পুরোহিতদের প্রতি তিনি এজন্য সারা জীবনই একধরণের দায়বদ্ধতা লালন করেছেন। বৃদ্ধ বয়সে তার ছাত্র পিথাগোরাসকে তিনি এ সম্বন্ধে বলেছিলেন যা শুনে পিথাগোরাস মিশর ভ্রমনে যান এবং ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করেন।
তিনি ব্যবসা থেকে অল্পকালের মধ্যেই অবসর নেন। কিন্তু অন্যান্যদের মত অগাধ অর্থের সাহায্যে অলস ও বিলাসবহুল সময় অতিবাহিত করার পরিবর্তে এ সময় তিনি দর্শন ও গণিতের চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি এতটাই আত্মমগ্ন ছিলেন যে কথিত আছে একদিন আকাশের তারকারাজির দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ অবস্থায় সান্ধ্য ভ্রমনকালে গর্তে পরে যান এবং এক বৃদ্ধা কর্তৃক তিরস্কৃত হন।
- কবি এবং দার্শনিক জেনোফেনিসের মতে থেলিস ৫৮৫ সালের ২৮ মে তারিখে সংঘটিত সূর্যগ্রহন সম্বন্ধে ভবিষ্যৎবাণী করেন এবং তা পুরোপুরি ফলে যায় আর এ কারণেই তার জনপ্রিয়তা দ্রুত ছড়িয়ে পরে। তবে হিরোডাটাস মনে করেন থেলিসের সূর্যগ্রহন বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করার কোন ক্ষমতা ছিলনা। উল্লেখ্য এই সূর্যগ্রহনের ফলে লিডিয়ার (Lydia) রাজা অ্যালিয়াটিস (Alyattes) এবং মিডিয়ার রাজা সিয়াক্সেরিস (Cyaxares) মধ্যে চলমান যুদ্ধটি থেমে গিয়েছিলো।
- ইতিহাসবেত্তা হিরোডাটাসের মতে থেলিস একজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ছিলেন যিনি অ্যাজিয়ান অঞ্চলের আইওনিয়ান নগররাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে একটি ফেডারেশন গড়ে তোলার ব্যাপারে সালিশী (Advocacy) করেছিলেন।
[সম্পাদনা] চিন্তাধারা
অ্যারিস্টটল লিখেছেন যে থেলিস সমস্ত বিশ্ব একটি মাত্র উপাদান দ্বারা গঠিত, এ চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছেন। প্রকৃতই থেলিস এ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একটি দর্শনবিষঙক অনুকল্প প্রস্তাব করেন যা পানি দর্শন নামে পরিচিত। এ দর্শন মতে সমগ্র বিশ্বজগৎ পানি থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তার নিজের ভাষায়, "সব বস্তুই পানি"; সব বস্তুই যে পানি নয় এটা তার দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বের কাছে অতি নগন্য ছিল। একজন দার্শনিকের মতই বিমূর্ত এর অস্তিত্ব আছে বলে বিশ্বাস করতেন।
এছাড়া তার আরও অনেক বিখ্যাত উক্তি রয়েছে যা তার বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়। যেমনঃ
- নিজেকে জানো (Know thyself)
- কোনও কিছুর অতিরিক্ত ভালো নয় (Nothing in excess)
[সম্পাদনা] অবদান
- থেলিস কিছু যুগান্তকারী উপপাদ্যের জনক। জ্যামিতির পাঁচটি উপপাদ্য প্রণয়নের জন্যই মূলত তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। উপপাদ্যগুলো হল:
- একটি বৃত্ত তার যেকোনও ব্যস দ্বারা সমদ্বিখণ্ডিত হয়।
- সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান সমান বাহুগুলোর বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান।
- অর্ধবৃত্তস্থ কোণের পরিমাণ এক সমকোণ বা ৯০o।
- পরস্পরছেদী দুটি সরলরেখা দ্বারা উৎপন্ন বিপ্রতীপ কোণদ্বয় পরস্পর সমান।
- যদি কোনও ত্রিভুজের ভূমি এবং ভূমিসংলগ্ন কোণদুইটি দেয়া থাকে তবেই কেবল ত্রিভুজটি আঁকা যাবে।
বর্তমানে এগুলোকে খুব সরল মনে হলেও তৎকালীন সময়ের জন্য এগুলো ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিশরে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলত আর এই আলোচনাগুলোকেই উপপাদ্যগুলো সাধারণ সত্যে পরিণত করেছিল।
- থেলিসের জ্যামিতি হতে বীজগণিতের ধারণা পাওয়া যায়। তিনিই প্রথম দেখান যে একটি বিন্দু নির্দিষ্ট শর্তাধীনে চলমান হয়ে জ্যামিতিক সঞ্চারপথ তৈরি করে।
- থেলিস তৎকালীন ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করে সঠিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন এবং পৃথিবীর সকল ক্ষণস্থায়ী বস্তু বা বিষয়ের মধ্যকার নিয়ম অনুসন্ধানের প্রচেষ্টার সূত্রপাত করেন। তিনি প্রকৃতিকে মানবীয় গুণাবলীসম্পন্ন দেবতাদের (Anthropomorphic Gods) কাজ না ভেবে বরং প্রকৃতির মধ্যে কারণের অনুসন্ধান চালান। তার উত্তরসূরী অ্যানাক্সিমান্দার এবং অ্যানাক্সিমিনিস এর ধারণাও অনুরুপ ছিল।
- তিনি প্রথম বছরে প্রকৃত দিনের সংখ্যা গণনায় সফলতা অর্জন করেন।
- তারকারাজি পর্যবেক্ষণের দ্বারা সমুদ্রে অবস্থানরত কোন জহাজের দূরত্ব নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
- মিশরীয়দের জ্যামিতিক ধারণা ছিল শুধুমাত্র তল সংক্রান্ত। কিন্তু থেলিস উপযুক্ত যুক্তির সাহায্যে কোন চিত্রের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেন। এর সাহায্যে কয়েকটি অংশের সাহায্যে অপর অংশগুলো সঠিকভাবে নিণর্য় করা যায়। এটি সমগ্র বিশ্বে একটি সম্পূর্ণ নতুন বিমূর্ত ধারণার জন্ম দেয় যার মূল প্রেরণা ছিল গ্রীকদের Abstract spirit বা বিমূর্ত চেতনা। এ আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্যোতির্বিদ্যার সূচনা ঘটে যার কৃতিত্ব গ্রীকদেরই প্রাপ্য। গ্রীকদের এ জ্যোতির্বিদ্যির মূল উদ্দেশ্য ছিল জ্যোতিষ্কগুলোর গতির মধ্যে জ্যামিতিক সম্পর্ক নির্ণয় করা।
[সম্পাদনা] নিবন্ধের উৎস
- A Galaxy of Mathematics - by - Professor Harunur Rashid
- এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা
[সম্পাদনা] প্রাসঙ্গিক নিবন্ধসমূহ
- গ্রীস
- অ্যানাক্সিমান্দার
- অ্যানাক্সিমিনিস
- পিথাগোরাস
- গণিতশাস্ত্র
- জ্যোতির্বিদ্যা
- দর্শন
- গ্রীক বিমূর্ত চেতনা
- মিলেটাস
- এশিয়া মাইনর
প্রাক-সক্রেটিয় দার্শনিকবৃন্দ |
---|
থেলিস • এনাক্সিম্যান্ডার • এনাক্সিমিনিস • পিথাগোরাস • ফিলোলাউস • আর্কাইটাস • এম্পিডক্লিস • হিরাক্লিটাস • পারমেনিডেস • এলেয়া-র জিনো • মেলিসাস • জেনোফেনিস • এনাক্সাগোরাস • লিউকিপ্পাস • ডিমোক্রিটাস • প্রোটাগোরাস • জর্জিয়াস • প্রোডিকাস • হিপ্পিয়াস • ফেরেসাইডিস |