হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আরবী উচ্চারণ শুনতে ক্লিক করুন محمد মুহাম্মাদ এবং মুহম্মদও বলা হয়), (তুর্কী: মুহাম্মেদ) ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ধর্মীয় বিশ্বাসমতে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী (আরবী: النبي an-nabiyyu) (ইংরেজী: The Prophet) অথবা " বার্তাবাহক" (আরবী: الرسول ar-rasūlu)(ইংরেজী: The messenger) যার উপর পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রচারক। প্রায় সকল ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতেই মুহাম্মদ (সা:) পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনে। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের প্রধাণ পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য। বিবাদকামী আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা।

একটি ধারাবাহিক রচনার অংশ যার বিষয়
ইসলামের নবী
মুহাম্মদ



  • কূটনীতিক হিসেবে
  • সেনানায়ক হিসেবে
  • স্বামী হিসেবে
  • সংস্কারক হিসেবে
  • ঐতিহাসিক অবদান

  • ইসলামী ভাবধারা
মিলাদুন নবী
কবিতা
ঘটনাপঞ্জি
  • অমুসলিম ভাবধারা
ইতিহাস বিচারে
সমালোচনা
  • Depictions
This box: প্রদর্শন  আলোচনা  সম্পাদনা
আরবী ক্যালিগ্রাফিতে "মুহাম্মাদ"
আরবী ক্যালিগ্রাফিতে "মুহাম্মাদ"

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] মুহাম্মদের জন্মের পূর্বে বিশ্বের অবস্থা

আরবী ক্যালিগ্রাফিতে "মুহাম্মাদ"
আরবী ক্যালিগ্রাফিতে "মুহাম্মাদ"

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মুহাম্মদের জন্মের পূর্বে বিশ্বের অবস্থা এবং মুহাম্মদের জন্মের পূর্বে আরবের অবস্থা

আরব বলতে এখানে মক্কা ও মদীনা এবং এদের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো নিয়ে গড়ে উঠা অংশকে বুঝানো হচ্ছে কারণ এই অংশের সাথেই মুহাম্মদের জীবনের সম্পৃক্ততা ছিল। অঞ্চলটি ছিল মরুভূমির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দ্বীপের মত। অবশ্য মরুভূমি ইসলামের উপর বিশেষ কোন প্রভাবের দাবীদার নয় কারণ এটি সকল স্থানেই প্রযোজ্য হয়ে দেখা দিয়েছে। মুহাম্মদের জন্মের পূর্বে আরবের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ভৌগলিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং নৈতিক অবস্থার আলোচনা এখানে অবশ্য আলোচ্য। আরবের অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল ব্যাবসা ও পশুপালন। নোমেডীয় অঞ্চলের সাথে এখানকার বাণিজ্য যোগাযোগ ছিল।

[সম্পাদনা] মুহাম্মদের জীবনের উপর তথ্যসূত্র

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মুহাম্মদের জীবনের ইতিহাস-লিখন

[সম্পাদনা] ইসলামী চরিতাভিধান অনুসারে জীবনী

এই নিবন্ধটি একটি ধারাবাহিক নিবন্ধ শ্রেণীর অংশ যার বিষয় হল

ইসলাম

ইসলামের ইতিহাস

বিশ্বাস ও অনুশীলন

সৃষ্টিকর্তার একত্ব
বিশ্বাস ও সাক্ষ্য
নামাযরোযা
হজ্জ্বযাকাতকালেমা

প্রধান ব্যক্তিত্ব

হযরত মুহাম্মদ (সা:)
আলীআবু বকর
মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথীবৃন্দ
মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরিবার
ইসলামের পয়গম্বর

গ্রন্থ ও আইন

কুরআনহাদীস • শরীয়ত
আইন • ধর্মতত্ব
মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী

ফিরকাহ

সুন্নীশিয়া

সামাজিক বিষয়াদি

শিক্ষা • দর্শন
শিল্পকলা • বিজ্ঞান
স্থাপত্য • শহর ও নগর
বর্ষপঞ্জী • বিশেষ দিবস
ইসলাম ও নারী • নেতা
রাজনীতি • ইসলামী চিন্তাধারা • উদারনৈতিকতা

আরও দেখুন

ইসলামী শব্দকোষ


[সম্পাদনা] জন্ম

হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর জন্মের তারিখ ছিল ১২ ই রবিউল আউয়াল, ইংরেজি সন মোতাবেক ৫৭০ খৃস্টাব্দে। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০ সনই ব্যবহার করেছেন। তবে নবীর প্রকৃত জন্মতারিখ বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। এজন্যই এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন এক বর্ণনা মতে তাঁর জন্ম ৫৭১ সালের ২০ বা ২২ শে এপ্রিল। সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে শেষোক্ত মতই ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশী নির্ভরযোগ্য। যাই হোক, নবীর জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহনের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।

[সম্পাদনা] শৈশব ও কৈশোর কাল

তত্কালীন আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরীর জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন। এই রীতি অনুসারে মোহাম্মদকেও হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপর নাম হালিমা সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেয়া হয়। এই শিশুকে ঘরে আনার পর দেখা যায় হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালনপালন করতে সমর্থ হন। তখনকার একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য - শিশু মোহাম্মদ কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি তার অপর দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। দুই বছর লালনপালনের পর হালিমা শিশু মোহাম্মদকে আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এর পরপরই মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু মুহাম্মদকে হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হালিমাও চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে। এতে তার আশা পূর্ণ হল। ইসলামী বিশ্বাসমতে এর কয়েকদিন পরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে - একদিন শিশু নবীর বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হয়। এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে সিনা চাকের ঘটনা হিসেবে খ্যাত।

এই ঘটনার পরই হালিমা মুহাম্মদকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান। এই সময় একদিন আমিনার ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যাবেন। সম্ভবত কোন আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর জিয়ারত করাই এর কারণ ছিল। আমিনা ছেলে, শ্বশুর এবং দাসী উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌঁছেন। তিনি মদীনায় একমাস সময় অতিবাহিত করেন। একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মোত্তালেব শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন। এর পর থেকে দাদাই মুহাম্মদের দেখাশোনা করতে থাকেন। মোহাম্মদের বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে মোহাম্মদের দায়িত্ব দিয়ে যান।

আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন। মুহাম্মদের বয়স যখন ১২ ব্ছর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেননা। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস সামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক মুহাম্মদকে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন। কারণ তিনি তার অন্তর দৃষ্টি দিয়ে লক্ষ্য করেন যে সব গাছপালা, পাথর এই বালকটিকে সেজদা করছে। ফুজ্জারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবীর বয়স ১৫ বছর। এই যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশগ্রহন করেন। যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন। কিন্তু তাঁর কিছু করার ছিলনা। সে সময় থেকেই তিনি কিছু একটি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন।

[সম্পাদনা] নবুয়তের পূর্বের জীবন

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: নবুওয়তের পূর্বে মুহাম্মদ

আরবদের মধ্যে উপস্থিত হিংশ্রতা, খেয়ানতদারীতা এবং প্রতিশোধমূলক মনোভাব দমনের জন্যই হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহাম্মদ এতে যোগদান করেন এবং এই সংঘকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় তরুণ বয়সে মুহাম্মদের তেমন কোন পেশা ছিলনা। তবে তিনি বকরি চরাতেন বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন। সাধারণত তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল বনি সা'দ গোত্রের। কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও চরাতেন। এরপর তিনি ব্যবসা শুরু করেন। মুহাম্মদ অল্প সময়ের মধ্যেই একাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার উপাধি হয়ে যায় আল আমিন এবং আল সাদিক যেগুলোর বাংলা অর্থ হচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী। ব্যবসা উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন। মুহাম্মদের সুখ্যাতি যখন চারতিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবগত হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান। মুহাম্মদ এই প্রস্তাব গ্রহন করেন এবং খাদীজার পণ্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান।

এই পাথরটিই মুহাম্মদ শান্তিপূর্ণভাবে সবগুলো গোত্র নিয়ে কা'বা গৃহের অভ্যন্তরে স্থাপন করেছিলেন
এই পাথরটিই মুহাম্মদ শান্তিপূর্ণভাবে সবগুলো গোত্র নিয়ে কা'বা গৃহের অভ্যন্তরে স্থাপন করেছিলেন

খাদীজা মাইছারার মুখে মুহাম্মদের সততা ও ন্যায়পরায়নতার ভূয়সী প্রশংশা শুনে অভিভূত হন। এছাড়া ব্যবসার সফলতা দেখে তিনি তার যোগ্যতা সম্বন্ধেও অবহিত হন। এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মদকে ভালবেসে ফেলেন। তিনি তার বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপরে তার মনের কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার কাছে শুনে মুহাম্মদ বলেন যে তিনি তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন জানাবেন। অবশ্য মানসিকভাবে তিনি তখনই রাজি ছিলেন। মুহাম্মদ তাঁর চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময় খাদীজার বয়স ছিল ৪০ আর মুহাম্মদের বয়স ছিল ২৫। খাদীজার জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি। খাদীজার গর্ভে মুহাম্মদের ৬ জন সন্তান জন্মগ্রহন করে যার মধ্যে ৪ জন মেয়ে এবং ২ জন ছেলে। তাদের নাম যথাক্রমে কাসেম, যয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম, ফাতিমা এবং আবদুল্লাহ। ছেলে সন্তান দুজনই শৈশবে মারা যায়। মেয়েদের মধ্যে সবাই ইসলামী যুগ পায় এবং ইসলাম গ্রহন করে এবং একমাত্র ফাতিমা ব্যতিত সবাই নবীর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করে।

মুহাম্মদের বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কা'বা গৃহের পূনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেশ কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয়। পুরনো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা শুরু হয়। এভাবে পুনঃনির্মানের সময় যখন হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর) পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। মূলত কোন গোত্রের লোক এই কাজটি করবে তা নিয়েই ছিল কোন্দল। নির্মাণকাজ সব গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হাজরে আসওয়াদ স্থাপন ছিল একজনের কাজ। কে স্থাপন করবে এ নিয়ে বিবাদ শুরু হয় এবং চার পাঁচ দিন যাবৎ এ বিবাদ চলতে থাকার এক পর্যায়ে এমনই মারাত্মক রূপ ধারণ করে যে হত্যা পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুমি একটি সমাধান নির্ধারণ করে যে পরদিন প্রত্যুষে মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে যে প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্তই সবাই মেনে নেবে। পরদিন মুহাম্মদ সবার প্রথমে কাবায় প্রবেশ করেন। এতে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়। আর তার প্রতি সবার ব্যপক আস্থাও ছিল। যা হোক এই দায়িত্ব পেয়ে মুহাম্মদ অত্যন্ত সুচারুভাবে ফয়সালা করেন। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং বিবদমান প্রত্যেক গোত্রের নেতাদের ডেকে তাদেরকে চাদরের বিভিন্ন কোণা ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন এবং তারা তা ই করে। এরপর তিনি পাথর উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন।

একাদশ শতাব্দীর পারসিয়ান কুরআনের একটি পৃষ্ঠা
একাদশ শতাব্দীর পারসিয়ান কুরআনের একটি পৃষ্ঠা

[সম্পাদনা] নবুওয়ত প্রাপ্তি

চল্লিশ বছর বয়সে ইসলামের নবী মুহাম্মদ নবুওয়ত লাভ করেন, অর্থাৎ এই সময়েই স্রষ্টা তার কাছে ওহী প্রেরণ করেন। নবুওয়ত সম্বন্ধে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় আজ-জুহরির বর্ণনায়। জুহরি বর্ণিত হাদীস অনুসারে নবী সত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেন। ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর নবী প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তাঁর স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাঁকে খাবার দিয়ে আসতেন। এমনি এক ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিব্রাইল তার কাছে আল্লাহ প্রেরিত ওহী নিয়ে আসেন। জিব্রাইল তাঁকে এই পংক্তি কটি পড়তে বলেন:

   
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।[১]

   
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

উত্তরে নবী জানান যে তিনি পড়তে জানেন না, এতে জিব্রাইল তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন। কিন্তু এবারও মুহাম্মদ নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন। এভাবে তিনবার চাপ দেয়ার পর মুহাম্মদ পংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। অবর্তীর্ণ হয় কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত। প্রথম অবতরণের পর নবী এতই ভীত হয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গ্রহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেন। বারবার বলতে থাবেন, "আমাকে আবৃত কর"। খাদিজা নবীর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নেন। ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মদকে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছে যান। নওফেল তাঁকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে। ধীরে ধীরে আত্মস্থ হন নবী। তারপর আবার অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য। একটি লম্বা বিরতির পর তাঁর কাছে দ্বিতীয় বারের মত ওহী আসে। এবার অবতীর্ণ হয় সূরা মুদ্দাস্‌সির-এর কয়েকটি আয়াত। এর পর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মদ। এই ইসলাম ছিল জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়ার জন্য প্রেরিত একটি আদর্শ ব্যবস্থা। তাই এর প্রতিষ্ঠার পথ ছিল খুবই বন্ধুর। এই প্রতিকূলততার মধ্যেই নবীর মক্কী জীবন শুরু হয়।

[সম্পাদনা] মক্কী জীবন

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: হিজরতের পূর্বে মুহাম্মদ

হেরা গুহা, এখানেই মুহাম্মদ প্রথম প্রত্যাদেশ পান
হেরা গুহা, এখানেই মুহাম্মদ প্রথম প্রত্যাদেশ পান

[সম্পাদনা] গোপন প্রচার

প্রত্যাদেশ অবতরণের পর নবী বুঝতে পারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে হবে; কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করা ব্যাতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোন উপায় ছিলনা। তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন। মুহাম্মদের আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন খাদিজা। এরপর মুসলিম হন মুহাম্মদের চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী, ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য নবী নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন; এই সভায় কেউই তাঁর আদর্শ সেন নেয়নি, এ সভাতে একজনই ইসলাম গ্রহণ করে, সে হলো আলী। ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর অন্তরঙ্গ বন্ধূ আবু বকর। এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। এই প্রচার ছিল সম্পূর্ণ গোপনে।

[সম্পাদনা] প্রকাশ্য দাওয়াত

তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। এ ধরণের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। নবী সাফা পর্বতের ওপর দাড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র রাসূল। কিন্তু এতে সকলে তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড খেপে যায় এবং এই সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার শুরু হয়।

[সম্পাদনা] মক্কায় বিরোধিতার সম্মুখীন

বিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে নির্যাতন শুরু করে: প্রথমত উস্কানী ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি, এরপর অপপ্রচার, কুটতর্ক এবং যুক্তি। এক সময় ইসলামী আন্দোলনকে সহায়হীন করার প্রচেষ্টা শুরু হয় যাকে সফল করার জন্য একটি নেতিবাচক ফ্রন্ট গড়ে উঠে। একই সাথে গড়ে তোলা হয় সাহিত্য ও অশ্লীল গান-বাজনার ফ্রন্ট, এমনকি একং পর্যায়ে মুহাম্মদের সাথে আপোষেরও প্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা। কিন্তু মুহাম্মদ তা মেনে নেননি; কারণ আপোষের শর্ত ছিল নিজের মত ইসলাম পালন করা, সেক্ষেত্র তার ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ভেস্তে যেতো।

[সম্পাদনা] ইথিওপিয়ায় হিজরত

ধীরে ধীরে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরম রুপ ধারণ করে তখন নবী কিছু সংখ্যক মুসলিমকে আবিসনিয়ায় হিজরত করতে পাঠান। সেখান থেকেও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনার চেষ্টা করে, যদিও তৎকালীন আবিসনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশীর কারণে তা সফল হয়নি।

[সম্পাদনা] গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ

এরপর ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হল উমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ। নবী সবসময় চাইতেন যেন আবু জেহেল ও উমরের মধ্যে যেকোন একজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করে। তার এই ইচ্ছা এতে পূর্ণতা লাভ করে। আরব সমাজে উমরের বিশেষ প্রভাব থাকায় তার ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে খানিকটা সহজ করে, যদিও কঠিন অংশটিই তখনও মুখ্য বলে বিবিচেত হচ্ছিল। এরপর একসময় নবীর চাচা হামযা ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণে আরবে মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়।

[সম্পাদনা] একঘরে অবস্থা

এভাবে ইসলাম যখন শ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছে তখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তার অনুসারী সহ সহ গোটা বনু হাশেম গোত্রকে একঘরে ও আটক করে। তিন বছর আটক থাকার পর তারা মুক্তি পায়।

[সম্পাদনা] দুঃখের বছর ও তায়েফ গমন

কিন্তু মুক্তির পরের বছরটি ছিল মুহাম্মদের জন্য দুঃখের বছর। কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্ত্রী খাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। দুঃখের সময়ে নবী মক্কায় ইসলামের প্রসারের ব্যাপরে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়ে এবার ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান (অবশ্য তায়েফ গমনের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে)। কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চূড়ান্ত অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন। এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে মুহাম্মদের পিছনে লেলিয়ে দেয়; তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে নবীকে রক্তাক্ত করে দেয়। কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েননি; নব নব সম্ভবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।

[সম্পাদনা] মি'রাজ তথা উর্দ্ধারোহন

এমন সময়েই কিছু শুভ ঘটনা ঘটে। ইসলামী ভাষ্যমতে এ সময় মুহাম্মদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমন ইতিহাসে ইসরা নামে পরিচিত। কথিত আছে, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন, এছাড়া তিনি বেহেশ্‌ত ও দোযখ সহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন। এই যাত্রা ইতিহাসে মি'রাজ নামে পরিচিত। এই সম্পূর্ণ যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোন সময়ই অতিবাহিত হয়নি বলে বলা হয়।

[সম্পাদনা] মদীনায় হিজরত

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মদীনায় হিজরত

এরপর আরও শুভ ঘটনা ঘটে। মদীনার বেশকিছু লোক ইসলামের প্রতি উৎসাহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। তারা মূলত হজ্জ্ব করতে এসে ইসলামে দাওয়াত পেয়েছিল। এরা আকাব নামক স্থানে মুহাম্মদের কাছে শপথ করে যে তারা যে কোন অবস্থায় নবীকে রক্ষা করবে এবং ইসলামে প্রসারে কাজ করবে। এই শপথগুলো আকাবার শপথ নামে সুপরিচিত। এই শপথগুলোর মাধ্যমেই মদীনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং একসময় মদীনার ১২ টি গোত্রের নেতারা একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের মাধ্যমে মুহাম্মদকে মদীনায় আসার আমন্ত্রণ জানায়।[২][৩] মদীনা তথা ইয়াসরিবে অনেক আগে থেকে প্রায় ৬২০ সাল পর্যন্ত গোত্র গোত্র এবং ইহুদীদের সাথে অন্যদের যুদ্ধ লেগে থাকে। বিশেষত বুয়াছের যুদ্ধে সবগুলো গোত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ায় প্রচুর রক্তপাত ঘটে। এ থেকে মদীনার লোকেরা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল যে, রক্তের বিনিময়ে রক্ত নেয়ার নীতিটি এখন আর প্রযোজ্য হতে পারেনা। এজন্য তাদের একজন নেতা দরকার যে সবাইকে একতাবদ্ধ করতে পারবে। এ চিন্তা থেকেই তারা মুহাম্মদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যদিও আমন্ত্রণকারী অনেকেই তখনও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। এই আমন্ত্রণে মুসলিমরা মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে যায়। সবশেষে মুহাম্মদ ও আবু বকর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদীনায় হিজরত করেন। তাদের হিজরতের দিনেই কুরাইশরা মুহাম্মদকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল যদিও তা সফল হয়নি। এভাবেই মক্কী যুগের সমাপ্তি ঘটে।

[সম্পাদনা] মাদানী জীবন

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মদীনায় মুহাম্মদ

নিজ গোত্র ছেড়ে অন্য গোত্রের সাথে যোগদান আরবে অসম্ভব হিসেবে পরিগণিত হত। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সেরকম নয়, কারণ এক্ষেত্রে ইসলামের বন্ধনই শ্রেষ্ঠ বন্ধন হিসেবে মুসলিমদের কাছে পরিগণিত হত। এটি তখনকার যুগে একটি বৈপ্লবিক চিন্তার জন্ম দেয়। ইসলামী পঞ্জিকায় হিজরতের বর্ষ থেকে দিন গণনা শুরু হয়। এজন্য ইসলামী পঞ্জিকার বর্ষের শেষে AH উল্লেখিত থাকে যার অর্থ: After Hijra।

[সম্পাদনা] স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সংবিধান প্রণয়ন

মুহাম্মদ মদীনায় গিয়েছিলেন একজন মধ্যস্থতাকারী এবং শাসক হিসেবে। তখন বিবদমান দুটি মূল পক্ষ ছিল আওস ও খাযরাজ। তিনি তার দায়িত্ব সুচারুরুপে পালন করেছিলেন। মদীনার সকল গোত্রকে নিয়ে ঐতিহাসিক মদীনা সনদ স্বাক্ষর করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংবিধান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। এই সনদের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়াপত্তন করা হয় এবং সকল গোত্রের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভুতি সৃষ্টি করা হয়। আওস, খাযরাজ উভয় গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও প্রধানত তিনটি ইহুদী গোত্র (বনু কাইনুকা, বনু কুরাইজা এবং বনু নাদির)। এগুলোসহ মোট আটটি গোত্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছিল। এই সনদের মাধ্যমে মদীনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মদ হন তার প্রধান।

[সম্পাদনা] মক্কার সাথে বিরোধ ও যুদ্ধ

মদীনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই মক্কার সাথে এর সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। মক্কার কুরাইশরা মদীনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে। মুহাম্মদ মদীনায় এসে আশেপাশের সকল গোত্রের সাথে সন্ধি চুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে অগ্রণী ছিলেন। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা গৃহত্যাগী সকল মুসলিমদের সম্পত্তি ক্রোক করে। এই অবস্থায় ৬২৪ সালে মুহাম্মদ ৩০০ সৈন্যের একটি সেনাদলকে মক্কার একটি বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাঁধা দেয়ার উদ্দেশ্যে পাঠায়। কারণ উক্ত কাফেলা বাণিজ্যের নাম করে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। কুরাইশরা তাদের কাফেলা রক্ষায় সফল হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়। আত্মরক্ষামূলক এই যুদ্ধে মুসলিমরা সৈন্য সংখ্যার দিক দিয়ে কুরাইশদের এক তৃতীয়াংশ হয়েও বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত যা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ তারিখে সংঘটিত হয়। মুসলিমদের মতে এই যুদ্ধে আল্লাহ মুসলিমদের সহায়তা করেছিলেন। যাহোক, এই সময় থেকেই ইসলামের সশস্ত্র ইতিহাসের সূচনা ঘটে। এরপর ৬২৫ সালের ২৩ মার্চে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিতে হয়। এতে প্রথম দিকে মুসলিমরা পরাজিত হলেও শেষে বিজয়ীর বেশে মদীনায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। কুরাইশরা বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও চূড়ান্ত মুহূর্তের নীতিগত দূর্বলতার কারণে পরাজিতের বেশে মক্কায় প্রবেশ করে। ৬২৭ সালে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের আরেকটি দল নিয়ে মদীনা আক্রমন করে। কিন্তু এবারও খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। যুদ্ধ বিজয়ে উৎসাহিত হয়ে মুসলিমরা আরবে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে আশেপাশের অনেক গোত্রের উপরই মুসলিমরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।

[সম্পাদনা] মদীনার ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক

কিন্তু এ সময় মদীনার বসবাসকারী ইহুদীরা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য হুমকী হয়ে দেখা দেয়। মূলত ইহুদীরা বিশ্বাস করতনা যে, একজন অ-ইহুদী শেষ নবী হতে পারে। এজন্য তারা কখনই ইসলামের আদর্শ মেনে নেয়নি এবং যখন ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তি বুঝতে পারে তখন তারা এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। মুহাম্মদ প্রতিটি যুদ্ধের পরে একটি করে ইহুদী গোত্রের উপর আক্রমন করেন। বদর ও উহুদের যুদ্ধের পর বনু কাইনুকা ও বনু নাদির গোত্র সপরিবারে মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়; আর খন্দকের পর সকল ইহুদীকে মদীনা থেকে বিতাড়ন করা হয়।[৪] মুহাম্মদের এই ইহুদী বিদ্বেশের দুটি কারণের উল্লেখ পাওয়া যায়, একটি ধর্মীয় এবং অন্যটি রাজনৈতিক[৫]। ধর্মীয় দিক দিয়ে চিন্তা করলে আহলে কিতাব হয়েও শেষ নবীকে মেনে না নেয়ার শাস্তি ছিল এটি। আর রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করলে, ইহুদীরা মদীনার জন্য একটি হুমকী ও দুর্বল দিক ছিল। এজন্যই তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়।[৬]

[সম্পাদনা] হুদাইবিয়ার সন্ধি

কুরআনে যদিও মুসলিমদের হজ্জ্বের নিয়ম ও আবশ্যকীয়তা উল্লেখ ককরা আছে, তথাপি কুরাইশদের শত্রুতার কারণে মুসলিমরা হজ্জ্ব আদায় করতে পারছিল না। মুহাম্মদ এক দিব্যদর্শনে দেখতে পান তিনি হজ্জ্বের জন্য মাথা কামাচ্ছেন। এ দেখে তিনি হজ্জ্ব করার জন্য মনস্থির করেন এবং ৬ হিজরী সনের শাওয়াল মাসে হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে ১৪০০ সাহাবা নিয়ে মদীনার পথে যাত্রা করেন। কিন্তু এবারও কুরাইশরা বাঁদা দেয়। অগত্যা মুসলিমরা মক্কার উপকণ্ঠে হুদাইবিয়া নামক স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে কুরাইশদের সাথে মুসলিমদের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে সুপরিচিত। এই সন্ধি মতে মুসলিমরা সে বছর হজ্জ্ব করা ছাড়াই মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে। সন্ধির অধিকাংশ শর্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে গেলেও মুহাম্মদ এই চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।

[সম্পাদনা] বিভিন্ন রাষ্ট্ররায়কদের কাছে পত্র প্রেরণ

[সম্পাদনা] মক্কা বিজয়

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মুসলমানদের মক্কা বিজয়

[সম্পাদনা] মক্কা বিজয়ের পর

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মক্কা বিজয়ের পরে মুহাম্মদ

[সম্পাদনা] মৃত্যু

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মুহাম্মদের মৃত্যু

[সম্পাদনা] সংস্কারক হিসেবে মুহাম্মদ

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: ইসলামের অধীনে প্রাথমিক সংস্কার

[সম্পাদনা] ইসলামী বর্ণনামতে মুহাম্মদের অলৌকিকত্ব

[সম্পাদনা] মুহাম্মদ সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা] ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে মুহাম্মদের অবদান

[সম্পাদনা] নব্যুওয়তের মোহর

[সম্পাদনা] মুসলিমদের শ্রদ্ধা নিবেদন

[সম্পাদনা] চিত্র বা ভাস্কর্যের মাধ্যমে চিহ্নিতকরণ

[সম্পাদনা] খ্রিস্টান ও পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা] অন্যান্য ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি

[সম্পাদনা] সমালোচনা

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মুহাম্মদের সমালোচনা

[সম্পাদনা] আরও দেখুন

  • আব্দুল্লাহ
  • হালিমা
  • আব্দুল মুত্তালিব
  • আবু তালিব
  • হিলফুল ফুজুল
  • ইসলাম
  • আল কুরআন
  • হাদিস
  • মুহাম্মদের স্ত্রীগণ

[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র ও পাদটীকা

  1. সূরা আলাক: মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের ৯৬ নং সূরা; প্রথম পাঁচ (১ - ৫) আয়াত। www.islamdharma.net -এ প্রাপ্ত কুরআনের বাংলা অনুবাদ থেকে নেয়া হয়েছে।
  2. Esposito (1998), pp.10-11
  3. F.E.Peters(2003), p.77
  4. F.E.Peters(2003), p.76-78

[সম্পাদনা] সহায়ক পাঠ্যসমূহ

  • গোলাম মোস্তফা. বিশ্বনবী.
  • Andrae, Tor (2000). Mohammed: The Man and His Faith. Dover. ISBN 0-486-41136-2.
  • Armstrong, Karen (1993). Muhammad: A Biography of the Prophet. San Francisco: Harper. ISBN 0-06-250886-5.
  • Cook, Michael (1983). Muhammad. Oxford University Press. ISBN 0-19-287605-8 (reissue 1996).
  • Dashti, Ali (1994). Twenty-Three Years: A Study of the Prophetic Career of Mohammad. Mazda. ISBN 1-56859-029-6.
  • Glubb, John Bagot (1970). The Life and Times of Muhammad. Hodder & Stoughton. ISBN 0-8154-1176-6 (reprint 2002).
  • Guillaume, Alfred, ed. (1955). The Life of Muhammad: A Translation of Ibn Ishaq's Sirat Rasul Allah. Oxford University Press. ISBN 0-19-636033-1.
  • Hamidullah, Muhammad (1998). The Life and Work of the Prophet of Islam. [s.n.](Islamabad: Islamic Research Institute). ISBN 969-8413-00-6.
  • Haykal, Muhammad Husayn (1995). The Life of Muhammad. Islamic Book Service. ISBN 1-57731-195-7.
  • Lings, Martin (1987). Muhammad: His Life Based on Earliest Sources. Inner Traditions International, Limited. ISBN 0-89281-170-6.
  • Motzki, Harald, ed. (2000). The Biography of Muhammad: The Issue of the Sources (Islamic History and Civilization: Studies and Texts, Vol. 32). Brill. ISBN 90-04-11513-7.
  • Rodinson, Maxime (1961). Muhammad. New Publishers. ISBN 1-56584-752-0.
  • Rubin, Uri (1995). The Eye of the Beholder: The Life of Muhammad as Viewed by the Early Muslims (A Textual Analysis). Darwin Press. ISBN 0-87850-110-X.
  • Schimmel, Annemarie (1985). And Muhammad is His Messenger: The Veneration of the Prophet in Islamic Piety. The University of North Carolina Press. ISBN 0-8078-4128-5.
  • Warraq, Ibn (2000). The Quest for the Historical Muhammad. Prometheus Books. ISBN 1-57392-787-2.
  • Watt, W. Montgomery (1961). Muhammad: Prophet and Statesman. Oxford University Press. ISBN 0-19-881078-4.
  • Berg, Herbert (Ed.) (2003). Method and Theory in the Study of Islamic Origins. E. J. Brill. ISBN 90-04-12602-3.
  • Lewis, Bernard (2002). The Arabs in History, 6th edition, Oxford University Press. ISBN 0-19-280310-7.
  • Stillman, Norman (1975). The Jews of Arab Lands: a History and Source Book. Jewish Publication Society of America. ISBN 0-8276-0198-0.

[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ

উইকিমিডিয়া কমন্সে নিম্নের বিষয় সংক্রান্ত ছবি, অডিও বা ভিডিও রয়েছে:
উইকিউক্তি তে নিচের বিষয় সম্পর্কে সংগৃহিত উক্তি আছে:

[সম্পাদনা] সাধারণ

[সম্পাদনা] মুসলিম রচিত

[সম্পাদনা] অমুসলিম রচিত

কুরআনে উল্লেখিত ইসলামের পয়গম্বরবৃন্দ
আদম ইদ্রিস নূহ হুদ সালেহ ইব্রাহিম লুত ইসমাইল ইসহাক ইয়াকুব ইউসুফ আইয়ুব
آدم ادريس نوح هود صالح ابراهيم لوط اسماعيل اسحاق يعقوب يوسف أيوب
Adam Enoch Noah Heber Shelah Abraham Lot Ishmael Isaac Jacob Joseph Job

শুয়াইব মূসা হারুন যুল কিফ্‌ল দাঊদ সুলাইমান ইলিয়াস আল ইয়াসা ইউনুস জাকারিয়া ইয়াহিয়া ঈসা মুহাম্মদ (সাঃ)
شعيب موسى هارون ذو الكفل داود سليمان إلياس اليسع يونس زكريا يحيى عيسى محمد
Jethro Moses Aaron Ezekiel David Solomon Elijah Elisha Jonah Zacharias John Jesus
v·d·e