ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি (ইংরেজিতে Science and Rationalists' Association of India) পশ্চিমবঙ্গের একটি বিজ্ঞান সংগঠন। ১৯৮৫ সালে কলকাতায় প্রগতিশীল ও মুক্ত চিন্তার মানুষদের নিয়ে এই সংগঠন গড়ে ওঠে। যদিও সমিতিটি যুক্তিবাদী সমিতি বলেই বেশি পরিচিত। সমাজে মুক্ত চিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার ঘটানোই ছিলো এই সংগঠনের উদ্দেশ্য। এটি কোন রাজনৈতিক দলের শাখা বা প্রশাখা নয়।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] সমিতির উদ্দেশ্য
বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদের বিকাশ ঘটনো এই সংগঠনের একমাত্র উদ্দেশ্য। যুক্তিবাদ বিকাশের মূল অন্তরায় ধর্মীয় ভাবাবেগ, কুসংস্কার ও বিভিন্ন সামন্ততান্ত্রিক মূল্যবোধ। তাই এই সমিতি জন্মলগ্ন থেকেই যাবতীয় কুসংস্কার, ধর্মীয় আবেগ, অলৌকিকত্ব, ঈশ্বরতত্ব, জাতপাত, জ্যোতিষ শাস্ত্র ও সমস্ত রকম অবৈজ্ঞানিক চিন্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। এই আন্দোলন আসলে বর্তমান আর্থসামাজিক অসাম্যকে টিকিয়ে রাখার সহায়ক সমস্ত মতাদর্শ, মূল্যবোধ, সামাজিক আচারানুষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
[সম্পাদনা] কর্মপন্থা
- বিভিন্ন 'অলৌকিক' ঘটনার অনুসন্ধান চালিয়ে তার পেছনের প্রকৃত সত্য জনসাধারনের সামনে তুলে ধরা
- জ্যোতিষ, ফেংশুই, বিকল্প চিকিত্সা ইত্যাদি বিজ্ঞানবিরোধী ও প্রতারণামূলক বিষয়গুলির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা
- কুসংস্কার ও আবিজ্ঞান বিরোধী সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা
- মন্ত্র-তন্ত্র, ওঝা ইত্যাদির বিরুদ্ধে এবং বৈজ্ঞানিক চিকিত্সার দাবীতে গণআন্দোলন গড়ে তোলা
- বিজ্ঞানমেলা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত করে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার পক্ষে জনমত তৈরি করা
- মানবধিকার লঙ্ঘিত হলে তার বিরুদ্ধে সরব হওয়া
- পরিবেশ আন্দোলন গড়ে তোলা
- শিশুগের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার জন্য ক্যাম্প করা
- নিয়মিত পাঠচক্র চালানো
- মরনত্তর দেহদানের জন্য জনমত গড়ে তোলা
- স্বল্প মূল্যে যুক্তিবাদী বইপত্র প্রকাশ, লিফলেট বিলি
- যুক্তিবাদের পক্ষে পথসভা, পোষ্টার প্রদর্শনী, গণসঙ্গীত, নাটক করা
[সম্পাদনা] সমিতির গঠন
এই সমিতির গঠনতন্ত্রের ধরণ পিরামিডিয়। সবার নীচে শাখা সংগঠন, তার উপরে আঞ্চলিক কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং কেন্ধ্রীয় কার্যকরী কমিটি। কেন্দ্রীর কর্যকরী কমিটি-ই সমিতির সর্বোচ্চ কমটি। প্রতিবছর জুন মাসে সমিতির কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সম্মেলন পরবর্তী এক বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নির্বাচন করে। বর্তমানে সমিতির মোট ৬টি অঞ্চলিক কমিটি আছে -
- উত্তর ২৪ পরগণা (১) আঞ্চলিক কমিটি
- উত্তর ২৪ পরগণা (২) আঞ্চলিক কমটি
- বাঁকুড়া আঞ্চলিক কমটি
- নদীয়া আঞ্চলিক কমিটি
- কোচবিহার আঞ্চলিক কমিটি
- জলপাইগুরি আঞ্চলিক কমিটি
প্রতিটি আঞ্চলিক কমিটির অধীনে বহু শাখা কাজ করে। তবে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের বিভিন্ন জায়গার একাধিক শাখা, সেখানে কোন নির্দিষ্ট আঞ্চলিক কমিটি গঠিত না হওয়ায় তারা সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে কাজ করে। বর্তমানে সমিতির প্রায় ৮০টি শাখা সংগঠন আছে। এদের মধ্যে ৩০টি অতি সক্রিয়। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শাখা হ'ল -
১। শ্যামনগর শাখা, উত্তর ২৪ পরগণা, ২। তাড়াবেড়িয়া শাখা, আমডাঙ্গা, উত্তর ২৪ পরগণা, ৩। চাকদহ শাখা, নদীয়া, ৪। মদনপুর শাখা, নদীয়া, ৫। আশোকনগর শাখা, উত্তর ২৪ পরগণা, ৬। বনগাঁ শাখা, উত্তর ২৪ পরগণা, ৭। বেহালা শাখা, দক্ষিন ২৪ পরগণা, ৮। কলকাতা শাখা, ৯। বেলগাছিয়া শাখা, হাওড়া ১০। দূর্গাপুর শাখা, বর্ধমান, ১১। রাধানগর শাখা, বাঁকুড়া, ১২। বিবর্দা শাখা, বাঁকুড়া, ১৩। মাথাভাঙ্গা শাখা, কোচবিহার, ইত্যাদি।
[সম্পাদনা] চ্যালেঞ্জ
তথাকথিত অবতার, জ্যোতিষী, ওঝা-গুনিন, অলৌকিক ক্ষমতাধারীদের বিরুদ্ধে সমতির চ্যালেঞ্জ - পৃথিবীর যে কেউ মন্ত্র শক্তি, জ্যোতিষ শাস্ত্রের অভ্রান্ততা বা অন্য কোন অলৌকিক ক্ষমতার প্রমান দিলে সমিতি তাকে ৫০,০০০ টাকা পুরস্কার দেবে, এবং সমিতি সেই সঙ্গে সমিতি তার অলৌকিকতা বিরোধী সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকবে ও তার হয়ে প্রচার করবে।
[সম্পাদনা] পরাজিত অবতার ও জ্যোতিষীরা
সমিতির জন্মের সময় থেকেই অবতার, জ্যোতিষী, অলৌকিক ক্ষমতাধারীদের বিরুদ্ধে এই চ্যালেঞ্জ জারী আছে। কিন্তু এদের প্রায় সবাই এই চ্যালেঞ্জের সামনে আসতে অপছন্দ করেন। যারা অর্থলোভে, প্রচার পেতে বা নেহাত দায়ে পরে চ্যালেঞ্জ নিতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের সবাই পরাজিত, বিধ্বস্ত অথবা পলাতক। এদের মধ্যে কয়েকজন হলেন - তারাপীঠের তান্ত্রিক নির্মলানন্দ, গৌতম ভারতী, ডাইনী সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতা, পুনের মিঠাইবাবা, সাইবাবা, সাইদাবাদী, আমেরিকার মরিস সেরুলো, ফকির এস পি আলি প্রমুখ।