তেজষ্ক্রিয়তা
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] আবিষ্কার
ফরাসী বিজ্ঞানী হেনরী বেকরেল ১৮৯৬ সালে এক্সরে নিয়ে গবেষনা করার সময় এমন একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রাকৃতিক ঘটনা আবিষ্কার করে ফেলেন যা সারা বিশ্বের বিজ্ঞান জগতে দারুন আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি দেখতে পান যে, ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত বিশেষ ভেদন শক্তি সম্পন্ন রশ্মি বা বিকিরন নির্গত হয়। তাঁর নামানুসারে এই রশ্মির নাম দেওয়া হয় বেকরেল রশ্মি। তিনি লক্ষ করেন যে মৌল থেকে এই রশ্মি নির্গত হয়, তা একটি সম্পূর্ন নতুন মৌলে রুপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত এই রশ্মি নির্গমন অব্যাহত থাকে। পরবর্তীকালে মাদাম কুরি ও তাঁর স্বামী পিয়ারে কুরি ব্যাপক গবেষনা চালিয়ে দেখতে পান যে রেডিয়াম, পোলোনিয়াম, থোরিয়াম, আ্যক্টিনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস থেকেও বেকরেল রশ্মির মত একই ধরনের রশ্মি নির্গত হয়, যা এখন তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নামে পরিচিত। যে সব মৌল হতে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তাদেরকে তেজষ্ক্রিয় মৌল বলে। তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের এই ঘটনাকে তেজষ্ক্রিয়তা(Radioactivity) বলে।
[সম্পাদনা করুন] সংজ্ঞা
ভারী মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি নির্গমনের প্রক্রিয়াকে তেজষ্ক্রিয়তা(Radioactivity) বলে।
[সম্পাদনা করুন] বৈশিষ্ট্য
- যে সকল মৌলের পারমানবিক সংখ্যা ৮২(82)-এর বেশী, সাধারনত সেই সকল পরমানু তেজষ্ক্রিয় হয়। তবে ৮২র থেকে হাল্কা অনেক মৌলের-ই কিছু সমস্থানিক তেজষ্ক্রিয়।
- তেজষ্ক্রিয় পদার্থ সাধারনতঃ আলফা, বিটা ও গামা এই তিন ধরনের তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই পজিট্রন, নিউট্রন, নিউট্রিনো, ইত্যাদিও নির্গত হতে পারে।
- তেজষ্ক্রিয়তা একটি সম্পূর্ণ নিউক্লিয় ঘটনা, এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের ভাঙনের ফলে একটি মৌল আরেকটি নতুন মৌলে রূপান্তরিত হয়।
- নিউক্লিয় ঘটনা, তাই তেজষ্ক্রিয়তা কে চাপ, তাপ, বিদ্যুৎ বা চৌম্বক ক্ষেত্রের ন্যায় বাইরের কোন সাধারণ ভৌত প্রক্রিয়া দ্বারা এর সক্রিয়তাকে রোধ বা হ্রাস বৃদ্ধি করা যায় না। তবে অত দ্রুতবেগ নিউট্রন, বা সূর্যের অভ্যন্তরের মত তীব্র তাপমাত্রা, বা সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময়কালীন চাপের মত চরম অবস্থায় নিউক্লিয় বিক্রিয়া ঘটান সম্ভব।
[সম্পাদনা করুন] তেজষ্ক্রিয় মৌলের অর্ধায়ু
যে সময়ে কোন তেজষ্ক্রিয় পদার্থের মোট পরমাণুর ঠিক অর্ধেক পরিমাণ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় তাকে ঐ পদার্থের অর্ধায়ু বলে।
[সম্পাদনা করুন] তেজষ্ক্রিয়তার একক
তেজষ্ক্রিয়তা পরমাপ করার জন্য যে একক ধরা হয় তাকে বলে হয় বেকেরেল। প্রতি সেকেন্ডে একটি তেজষ্ক্রিয় বিভাজন বা তেজষ্ক্রিয় ক্ষয়কে এক বেকেরেল বলে।
[সম্পাদনা করুন] ব্যবহার
(১) ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের কাজে তেজষ্ক্রিয়তার ব্যবহার করা হয়। (২) উন্নত বীজ তৈরীর গবেষনায় তেজষ্ক্রিয়তা সফল ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। (৩) খনিজ পদার্থে বিভিন্ন ধাতুর পরিমান নির্ণয়ে উক্ত ধাতুর তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ তেজষ্ক্রিয় প্রদর্শক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। (৪) ঘড়ির কাঁটায় তেজষ্ক্রিয় থোরিয়ামের সাথে জিঙ্ক সালফাইড মিশিয়ে ঘড়ির কাঁটা ও নম্বরে প্রলেপ দেওয়া হয় ফলে এরা অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে।
[সম্পাদনা করুন] তেজষ্ক্রিয়তার বিপদ
(১) এই রশ্মি জীবদেহে মারাত্নক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। (২) উচ্চ মাত্রার তেজষ্ক্রিয় বিকিরন মানবদেহে নানা রকম ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে। (৩) দীর্ঘদিন মাত্রাতিরিক্ত তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের সংস্পর্শে থাকলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, মানসিক বিকার এমন কি বিকলাঙ্গতাও দেখা দিতে পারে। (৪) এর ক্ষতিকর প্রভাব বংশ পরস্পরায়ও পরিলক্ষিত হয়। (৫) তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ।