বৌদ্ধ ধর্ম
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বৌদ্ধ ধর্ম বা ধর্ম (পালি ভাষায় ধম্ম) গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। বুদ্বের মৃত্যুর পরে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হয়। বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত। প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ (Sanskrit: Sthaviravāda)। দ্বিতীয়টি মহাযান নামে পরিচিত। ভর্যযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কোরিয়া সহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এই ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী রয়েছে।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] ব্যুৎপত্তি
আক্ষরিক অর্থে বুদ্ধ বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত, জ্ঞানী, জাগরিত মানুষকে বোঝায়। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে বোধি বলা হয় (যে অশ্বত্থ গাছের নীচে তপস্যা করতে করতে বুদ্ধদেব বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন তার নাম এখন বোধি বৃক্ষ)। সেই অর্থে যে কোনো মানুষই বোধপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত এবং জাগরিত হতে পারে। সিদ্ধার্থ গৌতম আমাদের এইকালের এমনই একজন 'বুদ্ধ'।
[সম্পাদনা করুন] বুদ্ধের দর্শন
বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বাসনা সর্ব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। এটাকে নির্বাণ (nirvana) বলা হয়। নির্বাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিভে যাওয়া (দীপনির্বাণ, নির্বাণোন্মুখ প্রদীপ), বিলুপ্তি, বিলয়, অবসান। এই সম্বন্ধে বুদ্ধদেবের চারটি উপদেশ যা আর্যসত্য ((চত্বারি আর্য্য সত্যানি, Four Noble Truths) নামে পরিচিত। তিনি অষ্টবিধ উপায়ের মাধ্যমে মধ্যপন্থা অবলম্বনের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন।
[সম্পাদনা করুন] পরকাল
বুদ্ধ পরকাল সমন্ধে বিশদভাবে কিছু ব্যাখা করেননি। কিন্তু পরকালে অস্তিত্ব অস্বীকার করেননি। দেহ কি আত্মা হতে অবচ্ছিন্ন বা মৃত্যুর পর আত্মা থাকে কিনা , এইসব প্রসংগ তিনি এড়িয়ে গেছেন। হাতী সমন্ধে যেমন অন্ধের কোনো সঠিক জ্ঞান হয়না, বিভিন্ন অন্ধের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়, তেমনই যে বিষয় প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ করা যায়না, সে বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে তিনি মনে করতেন [এই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ।
[সম্পাদনা করুন] বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতি
[সম্পাদনা করুন] চার আর্যসত্য
চারটি আর্যসত্য হচ্ছে:
- যথা দুঃখ
- দুঃখ সমুদয়: দুঃখের কারণ
- দুঃখ নিরোধ: দুঃখ নিরোধের সত্য
- দুঃখ নিরোধ মার্গ : দুঃখ নিরোধের পথ
[সম্পাদনা করুন] অষ্টবিধ উপায়
- সম্যক্ ধারণা
- সম্যক্ সংকল্প
- সম্যক্ বাক্
- সম্যক্ আচরণ
- সম্যক্ জীবনধারণ
- সম্যক্ মনন
- সম্যক্ ধ্যান
[সম্পাদনা করুন] ত্রিশরণ মন্ত্র
আর্যসত্য এবং অষ্টবিধ উপায় অবলম্বনের পূর্বে ত্রিশরণ মন্ত্র গ্রহণ করতে হয়। এই মন্ত্রের তাত্পর্য:
- ' বুদ্বাং সরঙ্গচ্ছামি' - আমি বুদ্বের শরণ নিলাম। বোধি লাভ জীবনের মূখ্য উদ্দেশ্য। বুদ্বত্ব মানে পূর্ণ সত্য, পবিত্রতা, চরম আধাত্মিক জ্ঞান।
- 'ধম্মাং সরঙ্গচ্ছামি'- আমি ধর্মের শরণ নিলাম। যে সাধনা অভ্যাস দ্বারা সত্য লাভ হয়, আধ্যাত্মিকতার পূর্ণ বিকাশ হয় তাই ধর্ম।
- 'সংঘাং সরঙ্গচ্ছামি' - আমি সংঘের শরণ নিলাম। যেখানে পূর্ণ জ্ঞান লাভের জন্য ধর্মের সাধনা সম্যক্ ভাবে করা যায় তাই সংঘ।
[সম্পাদনা করুন] দুঃখ
বুদ্ধ দুঃখের কারণ, দুঃখ দূর করার উপায় সমন্ধে উপদেশ দিয়েছেন। উনার মতে জীবন দুঃখপূর্ণ। দুঃখের হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। জন্ম, জরা, রোগ, মৃত্যু সবই দুঃখজনক। বাসনা সব দুঃখের মূল। মাঝে মাঝে যে সুখ আসে তাও দুঃখ মিশ্রিত। অবিমিশ্র সুখ বলে কিছু নেয়। নিবার্ণ লাভে এই দুঃখের অবসান। বাসনার নিস্তারের মাঝে অজ্ঞানের অবসান। এতেই পূর্ণ শান্তি।