সূর্য সেন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সূর্য সেন
বড় করুন
সূর্য সেন

সূর্য সেন (১৮৯৩-১৯৩৪) ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। মাস্টারদা নামে পরিচিত ছিলেন। পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালী বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন, এবং জীবন বিসর্জন করেন।

[সম্পাদনা করুন] সংক্ষিপ্ত জীবনী

সূর্য সেন ১৮৯৩ সালের ১০ ই অক্টোবর চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহন করেন। প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করলেও পরে বহররমপুর কলেজ থেকে ১৯১৮-তে বি.এ. পাস করেন। এর পর উমাতারা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষের দিকে অনুরূপ সেন, চারুবিকাশ দত্ত, অম্বিকা চক্রবর্তী, নগেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখের সঙ্গে চট্টগ্রামে গোপন বিপ্লবী দল গঠন করেন। গান্ধীজী- কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে অনেক বিপ্লবী এই আন্দোলনে যোগ দেন। এই সময় চট্টগ্রাম গুপ্ত বিপ্লবী সমিতির নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা গেলে সমিতি ভাগ হয়ে যায়। ভাগ হওয়ার পর বিপ্লবী সমিতির আবশিষ্ট অংশটি কংগ্রেসের প্রকাশ্য আন্দোলনে কলকাতার 'যুগান্তর দল'-এর সাথে সহযোগিতা করতে থাকে। এই অংশের সভাপতি ছিলেন সূর্য সেন। মহাত্মা গান্ধী অসহোযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলে বিপ্লবী দলগুলো আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। ১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর সূর্য সেনের গুপ্ত সমিতির সদস্যরা প্রকাশ্যে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া টাকা ছিনতাই করে। এর পর পুলিশ গোপনে খবর পেয়ে বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দিলে পুলিশের সাথে বিপ্লবীদের খন্ড যুদ্ধ হয় যা যুদ্ধনাগর থানা পাহাড় খন্ড যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধের পর গ্রেফতার হন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যান। ১৯২৬-এ টেগার্ট হত্যা প্রচেষ্টায় আবারও গ্রেফতার হয়ে ১৯২৮ সালে ছাড়া পান। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩০-এর ২৮শে এপ্রিল সশস্ত্র অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন। এর কয়েকদিন পর ২২শে এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে কয়েকশত নিয়মিত সেনা বাহিনীর সাথে বিপ্লবীদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী সাময়িকভাবে পলায়ন করে যা ছিল দেড়শত বছরের মধ্যে ইংরেজ বাহিনীর এদেশের মানুষের কাছে প্রথম সুস্পস্ট পরাজয়। তাই এই যুদ্ধের ঐতিহাসিক মূল্য অনেক। সূর্য সেনকে ধরার জন্য ইংরেজ সরকার প্রচুর টাকা পুরস্কার ঘোষনা করে। ১৯৩২ সালের ১৩ জুন সাবিত্রী চক্রবর্তীর বাড়িতে তাকে ধরার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৩৩-এর ২রা ফেব্রুয়ারী সূর্য সেন গৈরলা গ্রামে ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে গোপন থাকাকালে তার এক নিকট আত্মীয়ের বিশ্বাসঘাতকতায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তার বিচারের সময় তার বিরুদ্ধে কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলেও বিচারক তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। ১৯৩৪ সালের ১২-ই ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম জেলে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

অন্যান্য ভাষা