স্বপন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্বপন এল আর বির অন্যতম সিনিয়র মেমম্বার এবং বেস্ গীটারিস্ট। তিনি ১৯৬২ সালের ২রা নভেম্বর বাংলাদেশের পাবনা জেলায় জন্ম গ্রহন করেন। জনাব সোহ্রাব উদ্দীন এবং রামিছা বেগমের তিন সন্তানের মাঝে স্বপন দিত্বীয়।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] শৈশব - কৈশর:
তার জন্ম স্থান এবং পৈত্রিক বাড়ি পাবনা হলেও মাত্র ছয় মাস বয়সেই বাবার কর্মক্ষেত্রের সূত্রে চলে আসেন স্বপরিবারে চট্টগ্রামে। সেই সুবাদে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে শুরু করে সংগীতের ভূবনে জড়িয়ে পড়া সব কিছুই এই শহরেই। শৈশব কেটেছে দারুন আনন্দে। শৈশবের স্কুল ছিল আগ্রাবাদ গভমেন্ট হাই স্কুল পরে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম কলেজে থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন।
ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছে একটি পূর্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশে। যেখানে তার বাবা ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের তালিকা ভুক্ত একজন শিল্পী। মা জড়িত ছিলেন নানা সমাজ সেবা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে। বড় ভাই এবং ছোই ভাই ও ছিলেন সংগীতের সাথে জড়িত। তাই বলতে গেলে পরিবারের সবার কাছ থেকেই উৎসাহ পেয়েছেন সংগীত এর জন্য।
ছোট বেলার বন্ধুরা যখন সবাই মেতে ছিল সিনেমা এবং থিয়েটারে তখন সকল চিন্তায় ঘুরে ফিরত সংগীত। ফুটবলের প্রতিও প্রবল ঝোঁক ছিল। বাবা সোহ্রা্ব উদ্দীন-এর সাথে রেডিওর ষ্টুডিওতে গাইতে দেখেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত সব শিল্পীদের। বিখ্যাত গীটারিষ্ট নয়ন মুন্সির গীটার বাদনের সাথে পরিচয় হয়েছিল সেই সময়েই। তাই এ কথা সহজেই অনুমান করা যায় যে সংগীতের মোহনীয় ভুবনের সাথে তার পরিচয় ঘটে যায় খুব অল্প বয়সেই।
১৯৮৪ সালে প্রথম একুষ্টিক গীটার হাতে তুলে নেন। ১৯৮৫ সালের কথা সেই সময় রেডিও অষ্ট্রেলিয়াতে Dire Straights, Santana, Bob Marley, Black Sabbath এর মত বিশ্ব বিখ্যাত ব্যান্ড গুলো গান পরিবেশন করতো। তাঁদের গান আর অধুনিক যন্ত্র সংগীতের অপূর্ব মিশেল তাঁকে রক মিউজিকের দিকে ধাবিত করতে থাকে। আর স্বপন স্বপ্ন বুনে যেত তাঁদের মত বাজাবার। তখনই একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যায়। তাঁর ছোট ভাই বেস গীটার বাজাত সে সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস্-এ। ছোট ভাইয়ের সাথে একরকম প্রতিযোগীতা করেই বেস্ গীটার বাজাতে শুরু করেন। ছোট ভাইকে বলতেন- আমি এক দিন তোর চেয়ে ভাল বেস্ বাজাব।
তার গীটার শেখার পিছনে কোন প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। বলতে গেলে সম্পূর্ন নিজের প্রচেষ্টায় সাধনা করেছেন এই বাদ্য যন্ত্রটি। তিনি তার গীটার শেখা নিয়ে চমৎকার অভিজ্ঞতার কথা বর্ননা করেছেন এভাবে
“গীটার শেখার প্রবল আগ্রহ আমাকে পাগল করে রাখত। তখন চিটাগং এ আইয়ুব বাচ্চুকে বাজাতে দেখেছি। হঠাৎ করেই আমার ধ্যান- জ্ঞান সব কিছু আইয়ুব বাচ্চুতে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেল। যে করেই হোক তার কাছ থেকে এ যন্ত্র আমাকে বাজাতে শিখতে হবে। এই রকম একটি প্রবল ইচ্ছা থেকে তাকে খুঁজে বেড়াতাম চট্টগ্রামে তাঁদের আড্ডা দেওয়ার নানা জায়গায়। একদিন দেখাও হয়ে গেল আইয়ুব বাচ্চুর সাথে। বললেন- এসো স্বপন সময় করে তোমাকে শেখাব গীটার। এর পর বলতে গেলে গীটারে A-Z সবই তার হাত ধরে অর্জন করেছি। তার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার কোন শেষ নেই।”
[সম্পাদনা করুন] প্রথম ব্যান্ড
১৯৮৭ সালে প্রথম বারের মত যোগ দেন সদ্য প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড ফিলিংস এর বেস্ গীটারিষ্ট হিসেবে। যদিও এটি ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য কারন প্রতিষ্ঠার কিছু সময় পরেই ফিলিংস ভেঙ্গে যায়। জনপ্রিয় তারকা জেমসের এই ব্যান্ডটি পরে নগর বাউল নামে আবার গঠিত হয়। কিন্তু স্বপন আর নগর বাউলে ফিরে যায়নি। এল আর বি তে যোগদানের পূর্বে ফিলিংসই ছিল স্বপন-এর প্রথম। এর পরে ১৯৮৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে আইয়ুব বাচ্চুর সাথে বিভিন্ন স্টেজে সলো বাজাতেন।
[সম্পাদনা করুন] স্বপন ও এল আর বি
১৯৯১ সালের ৫ই এপ্রিল এর কথা, গঠিত হল এল আর বি। আইয়ুব বাচ্চু, স্বপন, টুটুল আর জয়কে নিয়ে যাত্রা শুরু হল বাংলা রক মিউজিক এর একটি স্বপ্নময় অধ্যায়ের। আর সেই স্বপ্নের শুরু থেকে আজও জড়িয়ে আছে স্বপন এর নাম। ব্যান্ড এর প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু ছাড়া স্বপন একমাত্র মিউজিশিয়ান যিনি ব্যান্ড এর সাথে কোন বিরতি ছাড়া পুরো সময় জুড়ে বাজিয়ে যাচ্ছেন।
[সম্পাদনা করুন] স্বপন ও তাঁর পরিবার
অত্যন্ত মিতভাষী আর কিছুটা লাজুক স্বভাবের স্বপন তাঁর ব্যাক্তিগত জীবনে স্ত্রী এবং একমাত্র মেয়েকে নিয়ে খুব সাদাসিধে আর সুখী মানুষ। শত ব্যাস্ততার ফাঁকেও পরিবারের মাঝে নিজের মত করে সময় কাটাতে ভাল লাগে। গীটার ও সংগীত নিয়ে এত দূর পথ চলায় তার পরিবারের অনুপ্রেরনা এবং সাহস যোগানোকে তিনি তার জীবনের একটি বিশাল অর্জন হিসেবে বর্ননা করেছেন।
[সম্পাদনা করুন] স্বপন ও তাঁর স্বপ্ন
তার ভাষায় এখনও অনেক কিছুই শেখা বাকী রয়ে গেছে। এখনও শিখে যাচ্ছেন নিরলস ভাবে। স্বপ্ন দেখেন বেস্ ইনিস্টিউট অফ টেকনলোজিতে বাজানো এবং শেখার। এটি আমেরিকায় অবস্থিত বিশ্ব বিখ্যাত Music Institute.
আর ধন্যবাদ দিতে চান এল. আর. বি-র Soldier-দের| এই দীর্ঘ পথ চলায় তাদের উৎসাহ তাকে সব সময় নতুন কিছু করার প্রেরনা যুগিয়েছে।