বারুক স্পিনোজা
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বারুক স্পিনোজা (Baruch Spinoza) (নভেম্বর ২৪, ১৬৩২ – ফেব্রুয়ারি ২১, ১৬৭৭), একজন ওলন্দাজ দার্শনিক। তিনি আধুনিক যুগের শুরুর একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূলত সবচেয়ে মৌলিক দার্শনিক।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] জীবনী
[সম্পাদনা করুন] জন্ম
বারুচ স্পিনোজা ১৬৩২ সালে আমস্টার্ডামে জন্ম গ্রহণ করেন।
[সম্পাদনা করুন] শৈশব, শিক্ষা ও কর্মজীবন
স্পিনোজা আমস্টার্ডামের ইহুদি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এক পরিবারের সন্তান। শৈশবে তার বন্ধুদের কাছে তিনি বেন্টো নামে পরিচিত ছিলেন। তালমুদ তোরাহ স্কুলের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিভাবান ছাত্র। বিধায় তার সম্প্রদায়ের রাব্বিগন(রাব্বি = ইহুদি সম্প্রদায়ের আধ্যাতিক নেতা) তাকে বিশেষভাবে খেয়াল করেন। মূলত, তার শিক্ষার উন্নতির সাথে সাথে রাব্বিরা তাকেও একজন ভবিষ্যত রাব্বি হিসেবে গড়ে তুলছিলেন। সতের বছর বয়সে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বন্ধ হয়ে যায় এবং তাকে পারিবারিক ব্যবসায় বসিয়ে দেওয়া হয়।
স্পিনোজা প্রচলিত ধর্মমতের কথা বলেছিলেন। সেজন্য তাকে ইহুদি সম্প্রদায় হতে বহিষ্কার করা হয়। এমনকি তার পরিবারের লোকজন ও তাকে ছেড়ে চলে যায়। চারপাশের মানুষ থেকে আক্রান্ত হয়ে তিনি একটি শান্ত এবং নিসঙ্গ জীবন বেছে নিয়ে পুরোপুরি দর্শনে মনোনিবেশ করেন। লেন্স পরিষ্কার করে উপার্জনের মাধ্যমে তিনি কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটাতেন।
[সম্পাদনা করুন] মৃত্যু
১৬৭৭ সালে হেগ শহরে স্পিনোজা মৃত্যু বরণ করেন।
[সম্পাদনা করুন] দর্শন
তিনি মনে করতেন অটল অনড় ডগমা আর বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানি টিকিয়ে রেখেছে খ্রিস্ট আর ইহুদি ধর্মকে। স্পিনোজার মত অনুযায়ী ইশ্বর জগৎটাকে সৃষ্টি করেছেন সেটার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবার জন্য নয়। তার মতে ইশ্বরই জগৎ, ইশ্বরের মধ্যেই রয়েছে জগৎটা। স্পিনোজা বিশ্বাস করতেন যা কিছু ঘটে সে-সবের অভ্যন্তরীণ কারন (inner cause) ইশ্বর বা প্রকৃতির নিয়ম। তিনি বাহ্যিক কারন নন, কারণ ইশ্বর প্রকৃতির নিয়মগুলোর ভিতর দিয়ে, এবং কেবল সেগুলোর ভিতর দিয়েই কথা বলেন।
দার্শনিক রেনে দোকার্ত বিশ্বাস করতেন যে বাস্তবতা পুরোপুরি আলাদা দুটো সারবস্তু (substance) চিন্তা (thought) আর বস্ত (matter) দিয়ে গঠিত। কিন্তু স্পিনোজা এই বিভাজনকে অস্বীকার করলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সারবস্তু আছে মাত্র একটি। অস্তিত্বশীল যে- কোনো বস্তু কে একটি মাত্র বাস্তবতায় কমিয়ে আনা যায়, যাকে তিনি বললেন শুধু সারবস্তু, মাঝে মাঝে তিনি সেটাকেই ইশ্বর বা প্রকৃতিও বলেছেন। অর্থাৎ তিনি প্রকৃতি আর সব কিছুর অবস্থাকে একটি মাত্র সার বস্তুতে নামিয়ে আনেন। প্রকৃতি বলতে তিনি অস্তিত্বশীল সবকিছুকেই, এমনকি আধ্যাতিক জিনিসগুলোকেও বোঝান।
স্পিনোজার মতে আমরা মানুষেরা ইশ্বরের দুইটি গুন বা প্রকাশকে চিনতে পারি। এই গুনগুলোকে তিনি বলেছেন ইশ্বরের লক্ষণ(attribute); এই লক্ষণ দুইটি আর দোকার্তের "চিন্তা" ও "ব্যাপ্তি" একই জিনিস। ইশ্বর বা প্রকৃতির নিজের প্রকাশ ঘটে চিন্তা বা ব্যাপ্তি হিসেবে। এটা খুবই সম্ভব যে "চিন্তা" আর "ব্যাপ্তির" চেয়ে ঢের বেশি-রীতিমত অসীম সংখ্যাক-লক্ষণ আছে ইশ্বরের। কিন্তু মানুষ কেবল এই দুটির কথাই জানে।
স্পিনোজা বলেছেন, আমাদের তীব্র আবেগ (passion)- যেমন উচ্চাকাঙ্খা আরে কামনাই আমাদেরকে সত্যিকারের সুখ ও সম্প্রিতি অর্জনে বাধা দেয়, কিন্তু আমরা যদি বুঝতে পারি যে প্রয়োজনের কারণেই সব কিছু ঘটে তাহলে সামগ্রিক প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা একটি সহজাত বোধ বা উপলব্ধি অর্জন করতে পারব। এ কথা বুঝতে পারব যে সব কিছুই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং প্রতিটি জিনিসই আসলে এক।