মোহাম্মদ আলী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোহাম্মাদ আলী (জন্ম জানুয়ারি ১৭, ১৯৪২, লুইসভিল, কেনটাকিত)বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা। তার পারিবারিক নাম ছিল ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে। ১৯৯৯ সালে তাকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় পদকে ভুষিত করে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড(en:Sports Illustrated). তিনি ১৯৭৫ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] বক্সিং জীবনের শুরু
১৯৫৪ সালের একদিন আলির সাইকেল চুরি হয়ে যায় তখন সে পুলিশ অফিসারকে(মার্টিন) জানায় যে সে চোরকে পেটাতে চায়। অফিসার(সে শহরের বক্সীং কোচ) তাকে বলে যে এর জন্য তাকে লড়াই করতে জানতে হবে। পরদিন তিনি মার্টিন এর কাছ থেকে বক্সিং শেখা শুরু করেন। তিনি তাকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে প্রজাপতির মত নেচে নেচে মৌমাছির মত হুল ফোটাতে হয়। ১৯৬০ সালে তিনি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেন।
৬’৩’’ উচচতার আলির বিশেষত্ব ছিল তিনি খেলার সময়ে সবার মত হাত মুখের সামনে রাখতেন না, শরীরের পাশে রাখতেন। প্রতিপক্ষের মার ঠেকানোর জন্য নির্ভর করতেন সহজাত প্রবিত্তির উপর। ২৯-১০-১৯৬০ এ তিনি প্রথম পেশাদার লড়াই জেতেন। ১৯৬০-১৯৬৩ তিনি টানা ১৯টি লড়াই জেতেন যার মধ্যে ১৫টি নকআউট। ১৯৬৩ সালে তিনি ডগ জোন্স এর সাথে ১০ বাউটের এক বিতর্কিত লড়াই এ জেতেন।
[সম্পাদনা করুন] প্রথম শিরোপার লড়াই
এর পর তিনি শিরোপাধারী সনি লিসটন এর প্রতিদ্বন্ধী হিসাবে গন্য হন, কিন্তু কেউ আশা করেনি যে তিনি জিতবেন। লড়াই এর আগে তিনি ঘোষনা দেন তিনি প্রজাপতির মত নেচে নেচে মৌমাছির মত হুল ফোটাবেন।
লিসটন ছিলেন অতিরিক্ত আত্ববিশ্বাষী। কিন্তু আলির ক্ষিপ্রতা তাকে লিস্টনের ঘুষি থেকে বাচিয়ে দেয়। তার উচ্চতার কারনে তিনি তাকে ঘুষি মারতে সক্ষম হন। ৪র্থ রাউন্ডে লিস্টন সামলে উঠেন। এ সময়ে আলির চোখে ধুলো ঢোকায় তিনি ঠিকমত দেখতে পারছিলেন না। তিনি শুধু লিস্টন ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন। ৬ষ্ঠ রাউন্ডে আলি সামলে উঠেন, এবং ৭ম রাউন্ডে লিস্টন পরাজয় মেনে নেন, যা অনেকের মনে ম্যাচটি পাতানো বলে সন্দেহর উদ্রেক জাগায়।
[সম্পাদনা করুন] ক্যাসিয়াস ক্লে হলেন মোহাম্মদ আলি
শিরোপা জ্য় করার পর তিনি দ্রুত খ্যাতির শীর্ষে পৌছে যান। এ সময় তিনি ঘোষনা দেন তিনি ‘’’নেশন অফ মুসলিম’’’(Nation of Muslim) গোত্রের সদস্য। তার নাম রাখা হয় ক্যাসিয়াস এক্স, কারণ তিনি মনে করতেন তার পদবী দাসত্বের পরিচায়ক। এর কিছুদিন পর গোত্র প্রধান সাংবাদিকদের কাছে তাকে মোহাম্মদ আলি বলে পরিচয় করিয়ে দেন।
[সম্পাদনা করুন] ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার
১৯৬৪ সালে তিনি সৈনিক জীবনে প্রবেশ করতে ব্যার্থ হন পরীক্ষায় অনুত্তীর্ন হয়ার কারনে। ১৯৬৬ সালে তিনি উত্তীর্ন হন। তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন যে কোরআন যুদ্ধ সমর্থন করে না। আল্লাহ বা নবীর নির্দেশ ছাড়া তিনি যুদ্ধে যাবেন না। কোন ভিয়েতকং এর সাথে তার বিরোধ নেই, তারা কেউ তাকে কালো বলে গালিও দেয়নি।তিনি ক্যাসিয়াস ক্লে বলে পরিচিত হতে চাননি, এ কারনে তিনি ১৯৬৬ সালে আমেরিকায় লড়াই এ অংশ নিতে পারেননি।
১৯৬৫ সালে লিস্টন এর সাথে ফিরতি ম্যাচের পর ১৯৬৭ সালে যরা ফলির সাথে ম্যাচের মধ্যে তিনি ৯ বার শিরোপা রক্ষার লড়াইএ নামেন। খুব কম বক্সারই এত কম সময়ে এত বেশি বার লড়াই করেন। তার জীবনের একটি অন্যতঅম কঠিন লড়াইএ তিনি ১২ রাউন্ডে জয় লাভ করেন। আলি ১৯৬৬ সালে আমিরিকায় ফিরে এসে ক্লিভলান্ড উইলিয়ামস এর সাথে লড়াই করেন। এটি তার সেরা ম্যাচগুলোর একটি যেটিতে তিনি ৩ রাউন্ডে জিতেন। ১৯৬৭ সালে তিনি হিউস্টন এর একটি রিং এ এরনি তেরেল এর সাথে ল্রড়াই এ নামেন। তেরেল তাকে ম্যাচ এর আগে ক্লে বলে অপমান করেন। আলি তাকে সঠিক শাস্তি দেয়ার মনস্থির করেন। ১৫ রাউণ্ডের এ লড়াইএ তিনি তাকে রক্তাক্ত করেন, অনেকে মনে করেন যে আলি ইচ্ছা করে লড়াই আগে শেষ করেননি। ১৯৬৭ সালে তিনি ৩ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন যুদ্ধে না যাওয়ার কারনে। ১৯৭০ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি লড়াইএ ফিরে আসতে সমর্থ হন।
[সম্পাদনা করুন] শতাব্দীর সেরা লড়াই
মার্চ ১৯৭১ সালে আলি জো ফ্রেজিয়ার এর মুখোমুখি হন যা শতাব্দীর সেরা লড়াই হিসাবে পরিচিত। বহুল আলোচিত এ লড়াইটি ছিলো দুই মহাবীরের লড়াই যা সকলকে শিহরিত করে। ফ্রেজিয়ার জয় লাভ করেন ও আলি প্রথমবারের মত পরাজিত হন। ১৯৭৪ সালের ফিরতি লড়াইএ তিনি শিরোপা পুনররুদ্ধার করেন।
[সম্পাদনা করুন] রাম্বেল ইন দ্যা জাংগল
তিনি ১৯৭৪ সালের অক্টোবারে জর্জ ফোরম্যান(en:george foreman) এর সাথে লড়াই এ নামেন যা “রাম্বেল ইন দ্যা জাংগল”(en:the rumble in the jungle) বলে পরিচিত। আলির ঘোর সমর্থকরাও এতে আলির সম্ভাবনা দেখেননি। ফোরম্যান ও নর্টন আলির সাথে প্রবলভাবে লড়াই করেন ও জর্জ তাদের ২ রাউণ্ডে পরাজিত করেন। ফোরম্যান ৪০ টির মধ্যে ৩৭ টি লড়াই নকআউটে জিতেন ৩ রাঊণ্ডের মধ্যে। আলি এ ব্যাপারটিকে কাজে লাগাতে চাইলেন। সবাই ভেবেচিলো তিনি ক্ষিপ্রতার সাথে লড়াই করবেন, কিন্তু তিনি দূরে দূরে থাকতে লাগলেন। ফোরম্যানকে তিনি আক্রমন করতে আমন্ত্রন করলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল তাকে ক্লান্ত করে দেয়া। ৮ম রাউন্ডে তিনি তার সুযোগ পেয়ে গেলেন ও ফোরম্যানকে নকআউট করলেন।
[সম্পাদনা করুন] মুসলমান ধর্ম গ্রহন
১৯৭৫ সালে তিনি মুসলমান ধর্ম গ্রহন করেন। তার মতে এ জন্য ভুমিকা রাখেন নেশন অফ মুসলিম এর প্রধান ডব্লু. ডি. মুহাম্মদ।
১৯৭৫ সালে আলি লড়াই করেন ফ্রেজিয়ার এর সাথে। দুজন বীরের এ লড়াইএর জন্য সকলে খুবই উত্তেজিত ছিল। ১৪ রাউণ্ডের শেষে ফ্রেজিয়ার এর কোচ তাকে আর লড়াই করতে দেননি কারন তার এক চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফ্রেজিয়ার এর কিছুদিন পরই অবসর গ্রহন করেন। ১৯৭৮ সালের এক লড়াইএ তিনি ১৯৭৬ এর অলিম্পিক মেডালিস্ট লিয়ন স্পিংক্স এর কাছে খেতাব হারান। তিনিই প্রথম যিনি একজন অপেশাদার এর কাছে হেরেছিলেন। ১৯৭৯ তিনি অবসর গ্রহন করেন।
[সম্পাদনা করুন] অবসর গ্রহন
তবে তিনি ১৯৮০ সালে ফিরে আসেন ল্যারি হোমস এর কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নিতে। ল্যারি ছিলেন তার শিষ্য তাই সকলেই লড়াইটি নিয়ে আগ্রহী ছিল। ১১ রাউন্ড পর আলি পরাজিত হন। পরে জানা যায় মস্তিস্কে মারাত্বক ত্রুটি ধরা পরেছে। তার মস্তিস্ক ফুটো হয়ে গিয়েছিল। পরে তিনি ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহন করেন(৫৬ জয় ৩৭টি নকআউটে ৫ পরাজয়)। তিনি হলেন সর্বকালের সেরা বক্সার।
[সম্পাদনা করুন] শেষ কথা
১৯৮০ সালে তিনি পারকিন্সন্স রোগে(en:parkinson’s disease) আক্রান্ত হন। তাকে যখন বলা হয় তিনি তার রোগের জন্য বক্সিংকে দায়ী করেন কিনা, তিনি বলেন বক্সিং না করলে এত বিখ্যাত হতেন না। অবসরের পরে তিনি তার জীবঙ্কে মানবতার কল্যানে উৎসর্গ করেছেন। বিশ্বশান্তির প্রতিষ্ঠার লক্ষে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।