জহির রায়হান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জহির রায়হান (আগস্ট ১৯, ১৯৩৫ - জানুয়ারি ৩০, ১৯৭২) একজন প্রখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার।

সূচিপত্র

[সম্পাদনা করুন] সংক্ষিপ্ত জীবনী

জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট মজলুর বৃহত্তর নোয়াখালীর ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা ছিলেন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। তাঁর ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার একজন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি। প্রাথমিক লেখাপড়া করে কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউট ও আলিয়া মাদ্রাসায়। দেশ বিভাগের পর নিজের গ্রামের বাড়ীতে ফিরে করেন। ফেনীর স্থানীয় আমিরাবাদ স্কুল হতে ১৯৫০-এ ম্যাট্রিক পাস করেন। ছাত্রাবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সাথে জড়িত হন। ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনের অংশ নিয়ে কারাবরন করেন। মুক্তিলাভের পর কলকাতায় প্রমথেশ বড়ুয়া মেমোরিয়াল ফটোগ্রাফি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩-এঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এস.সি. পাস করেন। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে কোর্স না শেষ করেই মেডিক্যাল কলেজ ত্যাগ করেন। ১৯৫৬ এর শেষ দিকে পাকিস্তানের প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক জারদরি-এর সহকারী মনোনিত হয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৬১ সালে চিত্রনায়িকা হেনা লাহিড়ী সুমিতা দেবীর সাথে পরিণয় হয়। ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ এর স্বল্প সময়ে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে অসাধারণ কর্ম সাধন করেন। ১৯৬৮ সালে চিত্রনায়িকা কোহিনূর আকতার সুচন্দার সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে কলকাতা চলে যান। সেখানে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর বিভিন্ন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মান করেন। বুদ্ধিজীবীদের বাংলাদেশ মুক্তি পরিষদ (Bangladesh Liberation Council of Intellegensia)-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পরপর‌ই ঢাকায় আসেন। এসেই শুনতে পান তার অগ্রজ শহীদুল্লাহ কায়সার নিখোঁজ। ১৯৭২ সালে তারই প্রচেষ্টায় বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭২-এর ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে নিখোঁজ শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।

[সম্পাদনা করুন] কর্মজীবন

[সম্পাদনা করুন] চলচ্চিত্র

১৯৬১-তে মুক্তি পায় তার প্রথম পরিচালিত ছবি 'কখনো আসেনি'। এরপর থেকে একে একে পরিচালনা করেন 'সোনার কাজল'(১৯৬২), 'কাঁচের দেয়াল'(১৯৬৩), 'বেহুলা'(১৯৬৬), 'আনোয়ারা'(১৯৬৭)। তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে প্রথম রঙিন(টেকনিকালার) ছবি 'সঙ্গম' তৈরি করেন ১৯৬৪ সালে। এছাড়া উর্দুতে তৈরি করেন পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি 'বাহানা'। তার অনন্য সৃষ্টি 'জীবন থেকে নেয়া' চলচ্চিত্রটি ১৯৭০ সালে মুক্তি পায়। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে শুরু করেছিলেন ইংরেজী ছবি 'Let Their Be Light'। যা শেষ করতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে বানানো শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রামান্য চিত্র। তৈরি করেন পাকিস্তানি বাহিনীর গনহত্যার প্রামান্য চলচ্চিত্র 'Stop Genoside'। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ' A State is Born' নির্মাণ করেন। তত্ত্বাবধান করেন 'Innocent Million' (পরিচালকঃ- বাবুল চৌধুরী) এবং 'Liberation Fighters' (পরিচালকঃ- আলমগীর কবির)।

[সম্পাদনা করুন] সাহিত্য

তিনি ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্য চর্চার সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৯ সালে 'নতুন সাহিত্য' পত্রিকা (কলকাতা)-য় 'ওদের জানিয়ে দাও' শীর্ষক কবিতা প্রকাশিত হয়। সাহিত্য মাসিক 'প্রবাহ' এবং ইংরেজী সাপ্তাহিক 'এক্সপ্রেস' পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রথম উপন্যাস 'শেষ বিকেলের মেয়ে' প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। আবহমান বাংলার গ্রামীন জীবনের পটভূমিতে রচনা করেন 'হাজার বছর ধরে' (১৯৬৪)। পর্যায়ক্রমে রচনা করেন ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে 'আরেক ফাল্গুন' (১৯৬৯), বিপর্যস্ত নাগরিক মধ্যবিত্ত পরিবারের চিত্র 'বরফ গলা নদী' (১৯৬৯), 'আর কত দিন' (১৯৭০), 'একুশে ফেব্রুয়ারী' (১৯৭০),'তৃষ্ণা', 'কয়েকটি মৃত্যু'। গল্পকার হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। 'সূর্য গ্রহন' তার সুপরিচিত গল্পগ্রন্থ।


[সম্পাদনা করুন] পুরস্কার

[সম্পাদনা করুন] বহিঃসংযোগ

অন্যান্য ভাষা